ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা কমানোর লক্ষ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। শনিবার উভয় দেশ এই বিষয়ে সম্মত হয়, কিন্তু চুক্তির কয়েক ঘণ্টা পরেই কাশ্মীর উপত্যকায় বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।
দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সীমান্ত অঞ্চলে বেশ কয়েক দিন ধরে গোলাগুলি ও সামরিক তৎপরতা বেড়ে গিয়েছিল, যা ১৯৪৭ সালের পর থেকে পঞ্চম বারের মতো সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি করেছিল।
সামরিক কর্মকর্তাদের আলোচনার পর শনিবার ভারতীয় সময় বিকেল ৫টায় (জিএমটি ১১:৩০) যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এর মাধ্যমে স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে সকল প্রকার আক্রমণ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তবে, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভারতীয় নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শ্রীনগরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এক্সে (সাবেক টুইটার) লেখেন, “যুদ্ধবিরতির কী হলো? শ্রীনগরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে।”
পাকিস্তানের লাহোর থেকে আল-জাজিরার প্রতিবেদক ওসামা বিন জাভেদ জানান, “যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানানো হলেও, আমরা মনে করি এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। নিয়ন্ত্রণ রেখায় (লাইন অব কন্ট্রোল) এরই মধ্যে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে।”
তিনি আরও জানান, স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, কাশ্মীর অঞ্চলে বেশ কয়েকটি স্থানে গোলাগুলি হয়েছে এবং কিছু বিস্ফোরক পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছে।
শ্রীনগরে বসবাসকারী সাংবাদিক উমর মেহরাজ আল-জাজিরাকে বলেন, “আমি আকাশে বিস্ফোরক উড়তে দেখেছি। এগুলো ক্ষেপণাস্ত্র নাকি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, তা স্পষ্ট নয়। বারামুল্লা ও জম্মুতেও একই ধরনের বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে।”
বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়েছে। বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের কোনো স্পষ্ট ধারণা না থাকায় বাসিন্দারা নিজেদের “নিরাপদ ও প্রস্তুতহীন” মনে করছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিবৃতিতে জানান, “যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দীর্ঘ আলোচনার পর ভারত ও পাকিস্তান একটি পূর্ণাঙ্গ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।” যদিও যুদ্ধবিরতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের মধ্যস্থতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার জানান, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে “পূর্ণাঙ্গ” যুদ্ধবিরতি হয়েছে এবং এতে প্রায় তিন ডজন দেশ কূটনৈতিকভাবে জড়িত ছিল।
অন্যদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারকো রুবিও জানিয়েছেন, এই চুক্তিতে বিভিন্ন বিষয়ে বৃহত্তর আলোচনার পরিকল্পনাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছে, “অন্য কোনো স্থানে অন্য কোনো বিষয়ে আলোচনার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।”
যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি, ভারত ও পাকিস্তান বিভিন্ন ইস্যুতে বৃহত্তর আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, ভারতের পক্ষ থেকে ২২ এপ্রিলের পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থাগুলো বহাল থাকবে।
এর মধ্যে বাণিজ্য ও ভিসা সংক্রান্ত বিষয়গুলোও রয়েছে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে পানি ইস্যুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের চুক্তি স্থগিত করেছে, যা দেশটির জীবনযাত্রা ও কৃষির উপর প্রভাব ফেলছে।
জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তে বসবাসকারী মানুষজন যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছেন। শ্রীনগরের বাসিন্দা ও আগামী সপ্তাহে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে যাওয়া রুমাইসা জান বলেন, “অনেক জীবন হারানোর পর এটি একটি বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত। আমরা শান্তি চাই এবং এই ধরনের শত্রুতার অবসান চাই।”
শ্রীনগরের এক ট্রাভেল এজেন্সির মালিক ফিরদৌস আহমদ শেখ বলেন, “আমার একমাত্র ভয় ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আবার খারাপ হতে পারে। এই দেশগুলোকে একসঙ্গে বসে কাশ্মীর সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। আমি প্রার্থনা করি, আমাদের সন্তানদের এমন দিন দেখতে না হোক।”
পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফ্ফরাবাদের বাসিন্দারাও যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের আশা, এর মাধ্যমে এই অঞ্চলে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত শান্তি ফিরে আসবে, যা বহু বছর ধরে সংঘাতের শিকার হয়েছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা