স্বাস্থ্যখাতে গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন মার্কিন স্বাস্থ্য সচিব রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র। তিনি অটিজমের কারণ অনুসন্ধানে একটি ডেটাবেস তৈরি করার ঘোষণা দিয়েছেন।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, কয়েক মাসের মধ্যে অটিজমের মূল কারণ খুঁজে বের করার এই পরিকল্পনাটি বাস্তবসম্মত নয়।
ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, স্বাস্থ্য সচিব কেনেডি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ (এনআইএইচ)-এর মাধ্যমে মেডিকেয়ার ও মেডিকেইড বীমার তথ্য এবং ডিজিটাল স্বাস্থ্য রেকর্ড একত্রিত করে একটি ডেটাবেস তৈরি করতে চান। তার মতে, এর মাধ্যমে অটিজমের কারণগুলো দ্রুত খুঁজে বের করা সম্ভব হবে।
তিনি উল্লেখ করেছেন, অটিজমের ক্রমবর্ধমান হার একটি “প্রতিরোধযোগ্য রোগের” ইঙ্গিত, যা সম্ভবত কোনো পরিবেশগত কারণে ঘটছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ডেটাবেস তৈরির পরিকল্পনা বিজ্ঞানসম্মত নয়।
কারণ, অটিজমের কারণ অনুসন্ধানে কয়েক দশক ধরে চলা গবেষণা এবং জেনেটিক কারণগুলো এখানে বিবেচনা করা হচ্ছে না।
দীর্ঘদিনের অটিজম গবেষক, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভিস মাইন্ড ইনস্টিটিউটের ডেভিড আমারাল বলেন, “অটিজমের কারণ যা-ই হোক না কেন, তা ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশে প্রভাব ফেলে। এমনকি শিশুদের ২-৩ বছর বয়স পর্যন্ত অটিজমের লক্ষণ দেখা না গেলেও, জৈবিক পরিবর্তনগুলো অনেক আগেই ঘটে যায়।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, অটিজমের সঙ্গে প্রায় ২০০টি জিনের সম্পর্ক রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অটিজম কোনো রোগ নয়, বরং এটি একটি জটিল স্নায়ু-বিকাশগত সমস্যা, যা ‘অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার’ (এএসডি) নামে পরিচিত।
এর লক্ষণগুলো একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যা দেখা যায়, যেমন কথা বলতে সমস্যা হওয়া বা বুদ্ধিগত প্রতিবন্ধকতা।
আবার কারো কারো ক্ষেত্রে সামান্য সামাজিক বা আবেগগত সমস্যা হতে পারে। বোস্টন ইউনিভার্সিটির অটিজম বিশেষজ্ঞ হেলেন টেইগার-ফ্লুসবার্গ বলেছেন, বর্তমানে হালকা ধরনের অটিজমের সংখ্যা বাড়ছে, কারণ চিকিৎসকরা ধীরে ধীরে এর লক্ষণগুলো সম্পর্কে অবগত হচ্ছেন।
গবেষণা বলছে, জিনগত কারণের পাশাপাশি পরিবেশগত কিছু বিষয়ও অটিজমের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যেমন— বাবার বয়স, গর্ভাবস্থায় মায়ের স্বাস্থ্য সমস্যা (ডায়াবেটিস), গর্ভাবস্থায় কিছু ওষুধের ব্যবহার এবং অপরিণত বাচ্চার জন্ম ইত্যাদি।
তবে, হামের ভ্যাকসিনের সঙ্গে অটিজমের কোনো সম্পর্ক নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেনেডির ডেটাবেস পরিকল্পনা অটিজমের কারণ অনুসন্ধানের জন্য উপযুক্ত নয়। কারণ, এতে জেনেটিক তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
ডেনমার্ক ও নরওয়ের মতো দেশগুলোতে জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে বিস্তারিত তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে গবেষণা করা সম্ভব হয়েছে।
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যখাতে এমন ডেটা সংগ্রহ করা বেশ কঠিন।
বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, স্বাস্থ্য বীমার তথ্য ব্যবহার করে অটিজম-বিষয়ক পরিষেবাগুলো আরও উন্নত করা সম্ভব।
তবে, কেনেডির এই পরিকল্পনা অটিজমের মূল কারণ খুঁজে বের করতে কতটা সহায়ক হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস