**ফল ও সবজির কীটনাশক: কোনগুলি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ? নতুন তালিকায় ব্ল্যাকবেরি ও আলু**
খাদ্যে কীটনাশকের উপস্থিতি এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় থাকা ফল ও সবজিতে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
সম্প্রতি, পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা ‘এনভায়রনমেন্টাল ওয়ার্কিং গ্রুপ’ (ইডব্লিউজি) তাদের প্রকাশিত ‘২০২৫ সালের ক্রেতাদের জন্য কীটনাশক নির্দেশিকা’ (Shopper’s Guide to Pesticides in Produce) – তে ফল ও সবজিতে কীটনাশকের উপস্থিতির মাত্রা নিয়ে একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। এই তালিকায়, কোন ফল ও সবজিতে কীটনাশকের পরিমাণ বেশি এবং কোনগুলিতে কম, তা উল্লেখ করা হয়েছে।
ইডব্লিউজি প্রতি বছর এই তালিকা তৈরি করে থাকে, যা ‘ডার্টি ডজন’ (Dirty Dozen) এবং ‘ক্লিন ফিফটিন’ (Clean Fifteen) নামে পরিচিত। ‘ডার্টি ডজন’-এ সেইসব ফল ও সবজির নাম থাকে, যেগুলিতে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ তুলনামূলকভাবে বেশি পাওয়া যায়।
আর ‘ক্লিন ফিফটিন’-এ থাকে কীটনাশকমুক্ত বা কম কীটনাশকযুক্ত ফল ও সবজির তালিকা। এই বছরের তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে ব্ল্যাকবেরি ও আলু।
তালিকার শীর্ষে রয়েছে পালং শাক। এছাড়াও তালিকায় স্ট্রবেরি, কালে (এক ধরনের পাতা), আঙ্গুর, পীচফল, চেরি, নেকটারিন, নাশপাতি, আপেল, ব্ল্যাকবেরি, ব্লুবেরি এবং আলু-এর মতো ফল ও সবজির নাম রয়েছে।
ইডব্লিউজি-র বিজ্ঞান বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যালেক্সিস টেমকিন জানিয়েছেন, এই নির্দেশিকা তৈরি করার মূল উদ্দেশ্য হল, ভোক্তাদের কীটনাশকের প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করা এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাহায্য করা।
তাঁর মতে, নিয়মিত অর্গানিক খাবার গ্রহণ করলে শরীরে কীটনাশকের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো যেতে পারে।
তবে, এই রিপোর্টের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে ‘অ্যালিয়েন্স ফর ফুড অ্যান্ড ফার্মিং’। তাদের মতে, ভোক্তাদের ফল ও সবজি কেনার ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া উচিত, তবে এই ধরনের তালিকা তাদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করা উচিত নয়।
তারা আরও জানায়, প্রচলিত পদ্ধতিতে উৎপাদিত ফল ও সবজিও স্বাস্থ্যকর এবং নিরাপদ।
এই তালিকায় ব্ল্যাকবেরি আগে কখনো অন্তর্ভুক্ত ছিল না, কারণ এর আগে মার্কিন কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) ব্ল্যাকবেরি পরীক্ষা করেনি।
অন্যদিকে, আলু দীর্ঘদিন পর এই তালিকায় ফিরে এসেছে, যার প্রধান কারণ হল ক্লোরপ্রোফাম নামক একটি প্ল্যান্ট গ্রোথ রেগুলেটরের ব্যবহার। এই রাসায়নিকটি ইউরোপীয় ইউনিয়নে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
অ্যালেক্সিস টেমকিন জানিয়েছেন, আলু সংরক্ষণে অঙ্কুরোদগম রোধ করতে এই রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, যা ভোক্তাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
অন্যদিকে, ‘ক্লিন ফিফটিন’-এর তালিকায় রয়েছে এমন সব ফল ও সবজি, যেগুলিতে কীটনাশকের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। এই তালিকায় রয়েছে আনারস, মিষ্টি ভুট্টা (তাজা ও জমাটবাঁধা), অ্যাভোকাডো, পেঁপে, পেঁয়াজ, মটরশুঁটি (জমাটবাঁধা), শতমূলী, বাঁধাকপি, তরমুজ, ফুলকপি, কলা, আম, গাজর, মাশরুম এবং কিউয়ি।
ইউএসডিএ-র পরীক্ষার পদ্ধতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে টেমকিন জানান, তারা ভোক্তাদের সাধারণ ব্যবহারের বিষয়টি অনুসরণ করেন।
ফল ও সবজি ধোয়ার সময় তারা ১৫ থেকে ২০ সেকেন্ড ধরে জল ব্যবহার করেন এবং খোসা ছাড়ানোর মাধ্যমে কীটনাশক দূর করার চেষ্টা করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফল ও সবজি খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধোয়া উচিত। বিশেষ করে, যাদের খোসা খাওয়া হয়, তাদের ক্ষেত্রে ধোয়ার গুরুত্ব অনেক বেশি।
মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) জানিয়েছে, সবজি পরিষ্কার করার জন্য ব্রাশ ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে ব্লিচ বা সাবান ব্যবহার করা উচিত নয়।
কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। গবেষণায় দেখা গেছে, কীটনাশকের কারণে অকাল প্রসব, জন্মগত ত্রুটি, গর্ভপাত, এবং মানুষের মধ্যে জিনগত ক্ষতি হতে পারে।
এছাড়া, কীটনাশকের সংস্পর্শ শুক্রাণু ঘনত্ব কমিয়ে দিতে পারে, যা হৃদরোগ ও ক্যান্সারের মতো সমস্যার কারণ হতে পারে।
শিশুরা কীটনাশকের প্রতি সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল। গর্ভাবস্থায় কীটনাশকের সংস্পর্শে আসা শিশুদের মধ্যে নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এই বিষয়টি মনে রেখে, খাদ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমাদের সচেতন হতে হবে এবং ফল ও সবজি খাওয়ার আগে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন