সোনার দামে ঊর্ধ্বগতি: অস্থির বিশ্ব অর্থনীতির মাঝে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গহনার বাজারে অস্থিরতা।
সোনার গহনা বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিয়ে থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সোনার ব্যবহার আমাদের সমাজে বহু পুরনো।
বর্তমানে, বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল পরিস্থিতিতে যখন সোনার দাম আকাশ ছুঁয়েছে, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও এর প্রভাব পড়েছে, তৈরি হয়েছে গহনার বাজারে নতুন মেরুকরণ।
লস অ্যাঞ্জেলেসের সেন্ট ভিনসেন্ট জুয়েলারি সেন্টারে এখন দিনভর চলছে পুরনো সোনা গলিয়ে নতুন করে ব্যবহারের হিড়িক।
যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম জুয়েলারি সেন্টারটিতে আসা-যাওয়া বেড়ে গেছে কয়েকগুণ।
একদিকে যেমন বহু মানুষ তাদের পুরনো গহনা, এমনকি পারিবারিক ঐতিহ্য হিসেবে পাওয়া সোনার জিনিসপত্রও বিক্রি করে দিচ্ছেন, তেমনই অনেকে আবার সোনার বার বা কয়েন কিনে রাখছেন ভবিষ্যতের জন্য।
তাঁদের ধারণা, শেয়ার বাজারের অস্থিরতার মধ্যে সোনা একটি নিরাপদ বিনিয়োগ হতে পারে।
এই বাজারের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সোনার দাম বাড়ার কারণে তাঁদের ব্যবসা এখন রমরমা।
পুরনো গহনা গলানোর কারিগর আলবার্তো হার্নান্দেজ জানিয়েছেন, তাঁর দোকানে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি কাজ হচ্ছে।
তাঁর ভাতিজা সাবাশডেন হার্নান্দেজ জানান, অনেক নতুন গ্রাহক আসছেন, যাঁরা তাঁদের দাদা-দাদীর আমলের পুরনো গহনা গলিয়ে নতুন ডিজাইন করাচ্ছেন।
তবে, সব ব্যবসায়ীর জন্য পরিস্থিতি এক রকম নয়।
কিছু জুয়েলারি ব্যবসায়ী, যাঁরা ইতালি, তুরস্ক এবং চীন থেকে গহনা আমদানি করেন, তাঁরা পড়েছেন বিপাকে।
সোনার উচ্চমূল্য এবং অতিরিক্ত শুল্কের কারণে তাঁদের লাভ কমে গেছে।
এক জুয়েলারি ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তাঁদের ব্যবসার মুনাফার পরিমাণ খুবই কম হয়ে গেছে।
আগে যে সোনার ব্রেসলেট ৬০০ ডলারে বিক্রি হতো, এখন তার দাম উঠেছে প্রায় ৯০০ ডলার।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।
বিনিয়োগ বিষয়ক পরামর্শদাতা জেফ ক্লার্কের মতে, সোনার দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কারণ, অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কায় মানুষ এখন নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সোনার দিকে ঝুঁকছে।
অতীতেও এমনটা দেখা গেছে, যখন মূল্যস্ফীতি বেড়েছিল, তখন সোনার দাম অনেক বেড়ে গিয়েছিল।
অন্যদিকে, যারা সোনা কিনছেন, তাঁদের ধারণা, সোনার দাম আরও বাড়বে।
নিউপোর্ট গোল্ড পোস্ট ইনকর্পোরেটেডের স্যাম নুয়েন জানিয়েছেন, তাঁর দোকানে সোনার বেচাকেনা কয়েকগুণ বেড়েছে।
তিনি মনে করেন, বছরের শেষ নাগাদ সোনার দাম প্রতি ট্রয় আউন্সে ৪,০০০ থেকে ৫,০০০ ডলারে পৌঁছাতে পারে।
আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দামের এই অস্থিরতা বাংলাদেশের বাজারেও প্রভাব ফেলে।
সোনার দাম বাড়লে স্থানীয় বাজারেও তার প্রভাব পড়ে এবং গহনার কেনাবেচায় পরিবর্তন আসে।
সাধারণত, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার সময় মানুষ সোনাকে একটি নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করে।
সব মিলিয়ে, বিশ্ব অর্থনীতির এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে সোনার দাম বাড়ছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গহনা বাজারে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।
এই পরিবর্তনের ঢেউ লেগেছে বাংলাদেশেও, যেখানে সোনা শুধু একটি মূল্যবান ধাতু নয়, বরং সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস