যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচেষ্টা কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাজ্যের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্যার চার্লস ক্লার্ক। তিনি মনে করেন, ট্রাম্পের ‘হুমকি ও তোষামোদ’-এর কৌশল ইউক্রেনে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতি আনতে পারবে না।
আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ক্লার্ক বলেন, ট্রাম্প সম্ভবত তাঁর একটি ‘বিরাট মুহূর্ত’ তৈরি করতে চাইছেন, যেমনটা তিনি উত্তর কোরিয়ার ক্ষেত্রে করতে চেয়েছিলেন। গত ১৭ এপ্রিল ট্রাম্প রাশিয়া ও ইউক্রেনকে একটি ‘চূড়ান্ত’ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন, যেখানে কিয়েভকে (Kyiv) আইনিভাবে ক্রিমিয়াকে (Crimea) মস্কোর কাছে ছেড়ে দিতে হতো। ক্লার্কের মতে, ইউক্রেন সম্ভবত কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রিমিয়ার ওপর থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে রাজি হবে না।
সাবেক এই ব্রিটিশ মন্ত্রী আরও বলেন, ট্রাম্প সম্ভবত রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের (Vladimir Putin) ওপর অতিরিক্ত বিশ্বাস স্থাপন করেছেন।
এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) নেতারা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির (Volodymyr Zelenskyy) সঙ্গে মিলিত হয়ে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন। তবে, তাঁদের প্রস্তাবনায় রাশিয়ার প্রতি কোনো ভূখণ্ড ছাড়ার কথা বলা হয়নি।
অন্যদিকে, রাশিয়ার সেনারা ইউক্রেনে উল্লেখযোগ্য কোনো এলাকা দখল করতে পারছে না। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, মার্চ মাসে রুশ বাহিনী ১৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করতে পেরেছে, যেখানে ফেব্রুয়ারিতে তাদের দখলে এসেছিল ১৯৬ বর্গকিলোমিটার এবং জানুয়ারিতে ছিল ৩২৬ বর্গকিলোমিটার। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (ISW)-এর তথ্য অনুযায়ী, মার্চে রাশিয়ার সেনারা ইউক্রেনের ২০৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করেছে।
ফেব্রুয়ারিতে তারা দখল করে ৩৫৪ বর্গকিলোমিটার এবং জানুয়ারিতে ৪২৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, রাশিয়ার সেনারা এই সামান্য ভূখণ্ড দখলের জন্য বিপুল পরিমাণ সৈন্য হারিয়েছে। তাঁদের হিসাব অনুযায়ী, শুধু মার্চ মাসেই রাশিয়ার প্রায় ৪ লাখ ৩০ হাজার ৭৯০ জন সৈন্য নিহত হয়েছে, যা ২০২২ ও ২০২৩ সালের সম্মিলিত ক্ষতির চেয়েও বেশি।
সেন্টার ফর জিওপলিটিক্সের পরিচালক এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ব্রেন্ডন সিমস মনে করেন, রাশিয়া সম্ভবত ইউক্রেনে একটি অপ্রতিদ্বন্দ্বী সামরিক বিজয় অর্জন করতে পারবে না। তাঁর মতে, ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেনকে নিরাপত্তা দিতে পারে, তবে সেক্ষেত্রে তাদের দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকতে হবে।
সিমস আরও বলেন, জার্মানির মতো কিছু দেশ হয়তো এমন আলোচনা করতে পারে যে, ইউক্রেনে যা ঘটছে তা খুবই দুঃখজনক, ট্রাম্পও খারাপ, কিন্তু আমরা ইউক্রেনকে সাহায্য করতে কিছুই করব না। বরং ট্রাম্পকে আমরা ইউক্রেনকে সমর্থন করা থেকে সরে আসার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করব।
তবে, ক্লার্ক সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দেওয়া বন্ধ করলে ইউক্রেনের জন্য ঝুঁকি বাড়বে। সিমসের মতে, ইউরোপ যদি পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইলের ভয় কাটিয়ে উঠতে পারে, তবে ইউক্রেন ও ইউরোপ উভয়ই জয়ী হতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা