যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে আইনি চ্যালেঞ্জ ক্রমশ বাড়ছে। তিনি বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছিলেন, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ কতটুকু বৈধ ছিল। এই নিয়ে আদালতে মামলা হয়েছে।
জানা গেছে, ট্রাম্প জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে এই শুল্ক আরোপ করেছিলেন। তাঁর যুক্তি ছিল, দেশের বাণিজ্য ঘাটতি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ। এই যুক্তিতে তিনি ১৯৭৭ সালের আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন (International Emergency Economic Powers Act – IEEPA) ব্যবহার করেন।
এর মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসান। যে দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি পণ্য কেনে না, তাদের ক্ষেত্রে এই শুল্কের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
কিন্তু এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীরা আদালতে গিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপের ক্ষমতা নেই। তাঁদের মতে, বাণিজ্য ঘাটতি কোনো জরুরি অবস্থা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতগুলোয় এখন পর্যন্ত সাতটির বেশি মামলা হয়েছে, যেখানে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। নিউইয়র্কের একটি আদালতে এ নিয়ে শুনানি হয়েছে।
মামলার শুনানিতে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে তাঁদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাঁরা বলছেন, বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে ব্যবসা করেন তাঁরা। কিন্তু শুল্কের কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে, যা তাঁদের জন্য সমস্যা তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতিতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এই মামলার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বিভিন্ন রাজ্যের সরকারও। ডেমোক্রেট দলের গভর্নরদের নেতৃত্বে থাকা রাজ্যগুলোও ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতির বিরোধিতা করছে। তাঁদের যুক্তি হলো, শুল্ক আরোপের ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে, প্রেসিডেন্টের নয়।
তবে, ট্রাম্প প্রশাসন তাদের পদক্ষেপের সমর্থনে অতীতের নজির দেখাচ্ছে। তারা বলছে, অতীতেও প্রেসিডেন্টরা জরুরি অবস্থার ক্ষমতা ব্যবহার করে শুল্ক আরোপ করেছেন। যেমন, ১৯৭০-এর দশকে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনও একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যেতে পারে। যদি তাই হয়, তবে আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। যদি আদালত মনে করে, জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে শুল্ক আরোপ করাটা বেআইনি, তাহলে ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া পদক্ষেপ বাতিল হয়ে যেতে পারে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের একাংশও বাণিজ্য নীতির ওপর কংগ্রেসের ক্ষমতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। কিছু আইনপ্রণেতা প্রস্তাব করেছেন, নতুন করে শুল্ক আরোপ করতে হলে প্রেসিডেন্টকে আগে কংগ্রেসের অনুমোদন নিতে হবে। কিন্তু ট্রাম্পের সমর্থক রিপাবলিকানদের বিরোধিতার কারণে এই প্রস্তাব আইনে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতির কারণে আমেরিকার ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস