ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর এবং পরিবারের ব্যবসায়িক যোগসূত্রের গভীরতা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, এই সফরের কারণ কি কেবল কূটনৈতিক সম্পর্ক নাকি এর পেছনে রয়েছে অন্য কোনো হিসাব?
ট্রাম্প পরিবারের এই অঞ্চলের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান ব্যবসায়িক সম্পর্ক ঘিরে তৈরি হয়েছে একাধিক বিতর্ক।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্য সফরের মধ্যেই তাঁর পরিবারের সদস্যদের ব্যবসায়িক তৎপরতা নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে, মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্প পরিবারের ব্যবসায়িক স্বার্থ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির মধ্যে সম্ভাব্য সম্পর্ক নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন।
ট্রাম্পের দুই ছেলে এরিক ও ডোনাল্ড জুনিয়র ইতোমধ্যেই এই অঞ্চলে একাধিকবার সফর করেছেন এবং তাঁদের পারিবারিক ব্যবসার প্রসারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। দুবাইয়ে একটি বিশাল আকারের ‘ট্রাম্প টাওয়ার’ নির্মাণের পরিকল্পনার ঘোষণা করা হয়েছে, যা এই অঞ্চলের সঙ্গে তাদের গভীর সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়।
এছাড়া ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্মেলনে তাঁদের উপস্থিতি এবং বিভিন্ন ব্যবসায়িক চুক্তি এই সম্পর্কের আরও একটি দিক।
মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্প পরিবারের ব্যবসা বিস্তারের বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কাতার এবং সৌদি আরবের মতো দেশগুলোতে তাঁদের বিলাসবহুল রিসোর্ট এবং অন্যান্য প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়েছে। এই বিনিয়োগের ফলে ট্রাম্প পরিবারের লাভের সম্ভাবনা বাড়ছে, যা তাঁদের পররাষ্ট্র নীতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
অনেকে মনে করেন, ট্রাম্পের এই সফর এবং তাঁর পরিবারের ব্যবসায়িক স্বার্থ—উভয়ই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
আবুধাবির একটি সরকারি বিনিয়োগ সংস্থা সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে তারা ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফাইনান্সিয়াল-এর ‘স্টেবলকয়েন’ ব্যবহার করে বিনান্স-এ ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। সমালোচকরা বলছেন, এর মাধ্যমে ট্রাম্প পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তিরা প্রতিটি ডলারে একটি অংশীদারিত্ব পাবে।
এছাড়াও, সৌদি সরকার সমর্থিত ‘এলআইভি গল্ফ’-এর সঙ্গে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এই গল্ফ টুর্নামেন্টগুলো ট্রাম্পের ফ্লোরিডার রিসোর্টে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকে মনে করছেন, ট্রাম্পের ব্যবসায়িক স্বার্থ এবং তাঁর রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মধ্যে একটি সংঘাতের সম্ভাবনা রয়েছে। কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ট্রাম্প হয়তো এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যা তাঁর পরিবারের আর্থিক লাভের জন্য সহায়ক হবে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থের পরিপন্থী হতে পারে।
হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে অবশ্য এই ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাম্প তাঁর পরিবারের ব্যবসা থেকে দূরে রয়েছেন এবং কোনো স্বার্থের সংঘাত হয় না।
তবে সমালোচকদের মতে, ট্রাম্পের ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক ব্র্যান্ড অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ট্রাম্পের এই সফরের কারণ হিসেবে বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং কাতারের মতো দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রকল্পে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে চাইছে।
ট্রাম্পের এই সফর সেই বিনিয়োগের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতে সহায়ক হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই সফর এবং তাঁর পরিবারের ব্যবসায়িক কার্যক্রম—উভয়ই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। এটি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং নৈতিকতার প্রশ্নগুলো আরও জোরালোভাবে সামনে নিয়ে আসে।
তথ্য সূত্র: