ডার্টমুরের পাথুরে চূড়া: প্রকৃতির এক বিস্ময়
ইংল্যান্ডের ডার্টমুরের বিস্তীর্ণ প্রান্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি – পাথুরে চূড়া বা ‘টর’ (Tor)। কয়েক কোটি বছর আগে গঠিত এই প্রাকৃতিক স্তম্ভগুলো যেন এক একটি বিশাল পাথরের প্রাসাদ, যা আজও দাঁড়িয়ে আছে সময়ের সাক্ষী হয়ে।
সম্প্রতি, এই টরগুলো নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে এর ভূতাত্ত্বিক গঠন, ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং স্থানীয় সংস্কৃতিতে এর প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে।
ডার্টমুরের এই টরগুলো আসলে প্রায় ২৮০ মিলিয়ন বছর আগের সৃষ্টি। এদের বিভিন্ন আকৃতি রয়েছে, যা কোনোটির কেল্লার মতো, কোনোটি দানবের মতো, আবার কোনোটি যেন দৈত্যের প্রতিচ্ছবি।
লোকমুখে প্রচলিত আছে, এইসব টরকে কেন্দ্র করে নানা কল্পকাহিনী ও কিংবদন্তি। স্থানীয়রা বিশ্বাস করে, একসময় এই টরগুলোর পূজা করা হতো।
প্রাচীনকালে ড্রুইড পুরোহিতরা সম্ভবত এদের পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচনা করতেন।
ঐতিহাসিকদের মতে, একসময় এই অঞ্চলের আদিবাসীরা সম্ভবত এই পাথুরে স্তম্ভগুলোকে পূজা করত। তাদের বিশ্বাস ছিল, এই পাথরগুলো স্বর্গ ও পৃথিবীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে।
ডার্টমুরের আশেপাশে পাওয়া গেছে প্রাচীন পাথরের বৃত্ত ও সারিবদ্ধ পাথরের নিদর্শন, যা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রমাণ বহন করে।
ডার্টমুরের এই স্থানটি প্রকৃতির এক অসাধারণ লীলাভূমি। এখানে আসা পর্যটকদের জন্য এটি এক বিশেষ আকর্ষণ।
এখানকার পাথুরে চূড়াগুলো যেন প্রকৃতির নীরব সাক্ষী হয়ে আজও টিকে আছে। প্রকৃতির এই মনোমুগ্ধকর রূপ শুধু পর্যটকদের আকৃষ্ট করে না, স্থানীয়দের জীবনেও যোগ করেছে এক বিশেষ অনুভূতি।
এই টরগুলোর প্রতি ভালোবাসা থেকেই সম্প্রতি একটি উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডার্টমুর টর্স ফেস্টিভাল’। আগামী ২০২৩ সালের ২৩ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত এই উৎসব চলবে।
এই উৎসবে শিল্পী, লেখক, পরিবেশবিদ, প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং সঙ্গীতশিল্পীরা একত্রিত হয়ে এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মানুষের অনুভূতির সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করবেন।
উৎসবটিতে বিভিন্ন ধরনের ওয়াক, আলোচনা সভা, এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশনার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রকৃতির এই বিস্ময়কর সৃষ্টি, যা কোটি কোটি বছর ধরে টিকে আছে, তা যেন আমাদের পূর্বপুরুষদের সঙ্গে একটি যোগসূত্র স্থাপন করে। পাথর, যা আপাতদৃষ্টিতে নিস্তেজ ও নীরব, আসলে সময়ের গভীরতায় অত্যন্ত জীবন্ত।
এটি একটি ভিন্ন মাত্রার জীবন, যা আমাদের ক্ষণস্থায়ী জীবনের চেয়ে অনেক দীর্ঘ।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান