থাইল্যান্ডে বন্যপ্রাণী পাচারের অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রাজধানী ব্যাংককের একটি গ্যাস স্টেশনে অভিযান চালিয়ে দুটি শিশু ওরাংওটাং উদ্ধার করা হয়, যাদের পাচার করার চেষ্টা করা হচ্ছিল।
বৃহস্পতিবার থাই পুলিশ জানায়, বুধবার ৪৭ বছর বয়সী ওই ব্যক্তিকে আটক করা হয়, যখন তিনি ওরাংওটাং দুটিকে ক্রেতার কাছে হস্তান্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, উদ্ধার হওয়া ওরাংওটাং-এর একটির বয়স আনুমানিক এক বছর, অন্যটির বয়স এক মাস। তাদের প্লাস্টিকের খাঁচায় রাখা হয়েছিল।
উদ্ধার হওয়া একটি ওরাংওটাং-এর ছবি প্রকাশ করেছে পুলিশ। ছবিতে দেখা যায়, শিশু ওরাংওটাং-টি একটি ডায়াপার পরে খেলনা ধরে আছে এবং তার পাশে দুধের বোতল রাখা।
থাই আইন অনুযায়ী, অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ‘সংরক্ষিত বন্যপ্রাণী অবৈধভাবে নিজের কাছে রাখার’ অভিযোগ আনা হয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে তার সর্বোচ্চ চার বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর পুলিশ কর্মকর্তা কাসিদাচ চারোয়েনলাপ জানান, তদন্তকারীরা ওরাংওটাং-এর উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। তিনি আরও জানান, আটক ব্যক্তি ওরাংওটাং দুটিকে পৌঁছে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন, তবে কোথা থেকে তাদের সংগ্রহ করা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি।
পুলিশ জানিয়েছে, তারা একটি অবৈধ বন্যপ্রাণী ব্যবসার নেটওয়ার্ক খুঁজে বের করেছে এবং ওরাংওটাংগুলো থাইল্যান্ডে নাকি বিদেশ থেকে আনা হয়েছে, তা জানার চেষ্টা চলছে। এই অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের মৎস্য ও বন্যপ্রাণী বিভাগ, নেদারল্যান্ডসের বন্যপ্রাণী বিচার কমিশন এবং জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক দপ্তর সহযোগিতা করেছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া ওরাংওটাং-এর নাম রাখা হয়েছে ক্রিস্টোফার ও স্টেফান। বর্তমানে তারা জাতীয় উদ্যান, বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ বিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অসুস্থতার কারণে এক মাস বয়সী স্টেফানকে ইনকিউবেটরে রাখা হয়েছে এবং এক বছর বয়সী ক্রিস্টোফারকে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, ওরাংওটাং দুটিকে প্রায় ৩ লক্ষ থাই বাথে (প্রায় ৯ লক্ষ ৭৫ হাজার বাংলাদেশী টাকা) বিক্রি করা হচ্ছিল।
ওরাংওটাং-রা সুমাত্রা ও বোর্নিও দ্বীপের আদি বাসিন্দা। এই দ্বীপগুলোতে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৃষ্টি বনভূমি রয়েছে।
বনভূমি ধ্বংস, বাসস্থান হ্রাস এবং শিকারের কারণে ওরাংওটাং-রা আজ হুমকির সম্মুখীন। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) লাল তালিকা অনুযায়ী, তারা ‘চরমভাবে বিপন্ন’ প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত।
ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের (ডব্লিউডব্লিউএফ) তথ্য অনুযায়ী, একসময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ওরাংওটাং-এর সংখ্যা অনেক বেশি ছিল, কিন্তু বর্তমানে তাদের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে থাইল্যান্ড অবৈধ বন্যপ্রাণী ব্যবসার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। মিয়ানমার, লাওস ও চীনের সঙ্গে দেশটির সীমান্ত এলাকা ‘গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল’ নামে পরিচিত।
ডব্লিউডব্লিউএফের মতে, এই এলাকা আন্তঃসীমান্ত পাচার, বন্যপ্রাণী ব্যবসা ও চোরাচালানের কেন্দ্র।
তথ্য সূত্র: সিএনএন