মাছি, মশা কিংবা তেলাপোকা – এদের গন্ধ কি সবাই পায়? সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। কেউ বলছেন, তারা মশা মারার আগে গন্ধ পান, আবার কারও মতে তেলাপোকার গন্ধে তাদের নাভিশ্বাস ওঠে।
পোকামাকড়ের গন্ধ নিয়ে মানুষের মধ্যে এই ভিন্নতা কেন, আসুন, সেই রহস্যের গভীরে যাওয়া যাক।
গন্ধ মূলত কিছু অণু বা মলিকিউলের সমষ্টি, যা বাতাসে ভেসে বেড়ায়। মানুষের নাকে রয়েছে অসংখ্য ঘ্রাণ রিসেপ্টর, যা এই অণুগুলোকে শনাক্ত করতে পারে।
ফ্রান্সের ন্যাশনাল সেন্টার ফর সায়েন্টিফিক রিসার্চের বায়োকেমিস্ট ক্লের দে মার্চ-এর মতে, “আমরা হাজারো রকমের গন্ধ পাই, কারণ প্রতিটি গন্ধের অণুর ধরন আলাদা এবং একেকটি গন্ধ রিসেপ্টরের ভিন্ন প্যাটার্ন তৈরি করে।
কিন্তু সমস্যা হলো, সবার ঘ্রাণ রিসেপ্টর এক রকম নয়। কারো কাছে একটি গন্ধ হয়তো তীব্র, আবার কারো কাছে তা সামান্য।
কারো কারো হয়তো কোনো গন্ধ একেবারেই টের পাওয়া যায় না। যেমন, ধনে পাতা বা সিলান্ট্রোর কথাই ধরুন। অনেকের কাছে এর গন্ধ সাবানের মতো লাগে, আবার কারো কাছে বেশ সুগন্ধি।
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির কীটতত্ত্ববিদ রবার্ট মিচেল বলছেন, “মানুষের শরীরে অনেক ধরনের ঘ্রাণ রিসেপ্টর থাকলেও, সবার কাছে সব রিসেপ্টর নাও থাকতে পারে।
কারও হয়তো কিছু রিসেপ্টরের অভাব রয়েছে, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে কিছু রিসেপ্টরের ভিন্নতা দেখা যায়।
এছাড়া, কিছু রিসেপ্টর হয়তো কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্তও হতে পারে। যাদের বেডবাগ বা ছারপোকার উপদ্রব বেশি, তাদের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ গন্ধ পাওয়া যায়, যা অনেকটা মিষ্টি ও পুরনো কাঠামোর মতো।
তবে যাদের ঘ্রাণশক্তি কম, তারা হয়তো সহজে এই গন্ধ টের পান না।
তাহলে, পোকামাকড়ের গন্ধ কি সত্যি? পোকামাকড়ের জগৎটাও কিন্তু গন্ধের ওপর নির্ভরশীল।
পোকামাকড়ের ঘ্রাণশক্তি খুব তীব্র। আত্মরক্ষার জন্য কিছু পোকা দুর্গন্ধ তৈরি করে, যা তাদের শিকারিদের দূরে রাখে। আবার, সঙ্গীর আকর্ষণেও তারা বিশেষ গন্ধ ব্যবহার করে।
স্ত্রী পোকা ফেরোমন নিঃসরণ করে, যা বাতাসে ভেসে আসে এবং পুরুষ পোকাদের আকর্ষণ করে। কিছু পোকা, যেমন ইউরোপিয়ান ফায়ারবাগ এবং লেডিবাগ, একত্রিত হওয়ার জন্য গন্ধের সাহায্য নেয়।
তবে, মানুষের ক্ষেত্রে পোকামাকড়ের সব গন্ধ হয়তো ধরা নাও পড়তে পারে। বিশেষ করে আত্মরক্ষার জন্য পোকারা যে গন্ধ তৈরি করে, সেটিই সম্ভবত আমরা টের পাই।
যেমন তেলাপোকার গন্ধ আসলে তাদের শরীর থেকে নয়, বরং তাদের বর্জ্য থেকে আসে। তাই, তেলাপোকা থাকলে দুর্গন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
সুতরাং, পোকামাকড়ের গন্ধ পাওয়া নিয়ে মানুষের মধ্যে যে ভিন্নতা, তার কারণ হলো ঘ্রাণ রিসেপ্টরের ভিন্নতা এবং পোকামাকড়ের গন্ধের প্রকারভেদ।
তাই, আপনি যদি পোকামাকড়ের গন্ধ পান, তবে একা নন। আবার, অন্যদের না পাওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক