এভারেস্ট জয়: ৭ দিনে শৃঙ্গ জয়ের স্বপ্নে প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তাদের দল, উদ্বেগে বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট জয় করার এক ব্যতিক্রমী অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন একদল প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তা। তাদের লক্ষ্য, প্রচলিত পদ্ধতির বদলে বিশেষ এক ধরনের গ্যাস ব্যবহার করে মাত্র সাত দিনের মধ্যে এভারেস্ট জয় করা। যদিও এই অভিনবত্বের কারণে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। কারণ, তাদের মতে এই পদ্ধতিতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি মারাত্মক হতে পারে।
জানা গেছে, এই অভিযানে অংশ নিতে যাওয়া দলটি সবাই প্রাক্তন সেনা সদস্য। তাদের মধ্যে আছেন একজন পাইলট, একজন রাজনীতিবিদ, একজন ব্যবসায়ী এবং একজন উদ্যোক্তা। তারা সবাই একটি দাতব্য সংস্থার জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে এই দুঃসাহসিক অভিযানে নামছেন। প্রচলিত পদ্ধতিতে এভারেস্ট জয় করতে সাধারণত ছয় থেকে দশ সপ্তাহ সময় লাগে। কিন্তু তারা ‘জেনন’ নামের একটি বিশেষ গ্যাস ব্যবহার করে এই সময়সীমা কমিয়ে আনতে চান। অভিযানের দশ দিন আগে তারা এই গ্যাস শরীরে প্রবেশ করাবেন।
অভিযাত্রীদের দলটির প্রধান আল কার্নস জানান, তাদের সকলেরই সামরিক বাহিনীর বিশেষ শাখায় কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ঝুঁকি মোকাবিলা এবং তা প্রশমনের বিষয়ে তাদের ভালো ধারণা আছে। তিনি আরও বলেন, ‘জেনন’ গ্যাস তাদের সাফল্যের সম্ভাবনা ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে পারে এবং উচ্চতাজনিত অসুস্থতা বা শরীরের ফোলাভাব (edema) কমাতেও সাহায্য করবে।
তবে, এই পদ্ধতির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। তাদের মতে, জেনন গ্যাস শরীরে প্রবেশ করালে মানুষের শরীরে এরিথ্রোপোয়েটিন (EPO) নামক হরমোনের উৎপাদন বাড়ে, যা রক্তের লোহিত কণিকাকে আরও সক্রিয় করে তোলে। এর ফলে শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ে এবং উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সুবিধা হয়। কিন্তু এই প্রক্রিয়াটি খুব দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। এছাড়াও, জেনন একটি চেতনানাশক গ্যাস হওয়ায় এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। এর প্রভাবে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে, যা পর্বতারোহণের মতো ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে মারাত্মক হতে পারে।
গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পিকক জানিয়েছেন, জেনন গ্যাস স্বল্প সময়ে এরিথ্রোপোয়েটিনের উৎপাদন বাড়াতে পারে কিনা, তা নিয়ে তিনি সন্দিহান। কারণ, এরিথ্রোপোয়েটিনের প্রভাবে লোহিত রক্তকণিকা তৈরি হতে বেশ কয়েক সপ্তাহ সময় লাগে।
আন্তর্জাতিক পর্বত ক্লাইম্বিং ফেডারেশন (UIAA) জানিয়েছে, জেনন গ্যাস ব্যবহারের ফলে পর্বতারোহণে পারফরম্যান্স বাড়ে এমন কোনো প্রমাণ নেই। বরং, এর অপব্যবহার অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে। এমনকি, ওয়ার্ল্ড অ্যান্টি-ডোপিং এজেন্সি (WADA) ২০১৪ সাল থেকে এই গ্যাসের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।
অভিযানটি পরিচালনা করছে ‘ফুরটেনবাক অ্যাডভেঞ্চারস’ নামের একটি সংস্থা। তাদের প্রধান লুকাস ফুরটেনবাক জানান, যারা দ্রুত সময়ে এভারেস্ট জয় করতে চান, তাদের জন্য এই পদ্ধতি সহায়ক হতে পারে। তবে, এর খরচ অনেক বেশি, প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা)।
এভারেস্ট জয় এখন আর আগের মতো কঠিন নয়। বর্তমানে শেরপা গাইড, অতিরিক্ত অক্সিজেন এবং আধুনিক সরঞ্জামের কারণে অনেক অভিযাত্রীর কাছেই এই শৃঙ্গ জয় সহজ হয়েছে। তবে, বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, জেনন গ্যাসের ব্যবহার পর্বতারোহণে নতুন ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তারা মনে করেন, যারা দ্রুত সময়ে এভারেস্ট জয় করতে চান, তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি আরও বেশি। কারণ, এতে শরীরের উচ্চতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার পর্যাপ্ত সময় থাকে না।
সবকিছু ঠিক থাকলে, এই মাসের মধ্যেই অভিযানটি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এখন দেখার বিষয়, এই ব্যতিক্রমী প্রচেষ্টা কতটুকু সফল হয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন