পুরুষদের স্বাস্থ্য বিষয়ক উদ্বেগের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো প্রোস্টেট ক্যান্সার। সাধারণত, পঞ্চাশোর্ধ্ব পুরুষদের মধ্যে এই রোগের ঝুঁকি বেশি দেখা যায়। সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রোস্টেট ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার পর বিষয়টি আবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে।
তাই, প্রোস্টেট ক্যান্সার স্ক্রিনিং বা পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা এবং এর সাথে জড়িত বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত হওয়া জরুরি।
প্রোস্টেট হলো পুরুষের প্রজননতন্ত্রের একটি অংশ, যা মূত্রাশয়ের নিচে অবস্থিত এবং বীর্য তৈরিতে সাহায্য করে। প্রোস্টেট ক্যান্সার হলে, প্রোস্টেট গ্রন্থিতে অস্বাভাবিক কোষ তৈরি হতে শুরু করে। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগটি শনাক্ত করা গেলে, এর চিকিৎসা সহজ হয় এবং জীবন বাঁচানোর সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
প্রোস্টেট ক্যান্সার শনাক্ত করার জন্য সাধারণত PSA (Prostate-Specific Antigen) পরীক্ষা করা হয়। PSA হলো প্রোস্টেট গ্রন্থি দ্বারা উৎপাদিত একটি প্রোটিন, যা রক্তের মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়।
রক্তে PSA-এর মাত্রা বেশি পাওয়া গেলে, তা প্রোস্টেট ক্যান্সারের একটি ইঙ্গিত হতে পারে। তবে, PSA-এর উচ্চ মাত্রা সবসময় ক্যান্সার নির্দেশ করে না। কিছু ক্ষেত্রে, প্রোস্টেট গ্রন্থির প্রদাহ, বয়সের কারণে অথবা অন্য কোনো স্বাস্থ্যগত কারণেও PSA-এর মাত্রা বাড়তে পারে।
তাই, PSA পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে, একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
PSA পরীক্ষার ফলাফল এবং অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে, ডাক্তাররা প্রোস্টেট ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। স্ক্রিনিংয়ের মূল উদ্দেশ্য হলো, ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা এবং সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা। তবে, স্ক্রিনিংয়ের কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে।
যেমন, কোনো কোনো ক্যান্সার খুব ধীরে বাড়ে এবং তাতে তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। স্ক্রিনিংয়ের কারণে এমন ক্যান্সার শনাক্ত হলে, অতিরিক্ত চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে, যা রোগীর জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
এ কারণে, বর্তমানে প্রোস্টেট ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের ক্ষেত্রে ডাক্তার এবং রোগীর মধ্যে আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডাক্তার রোগীর স্বাস্থ্যগত অবস্থা, পারিবারিক ইতিহাস এবং অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে, একটি উপযুক্ত স্ক্রিনিং পরিকল্পনা তৈরি করেন।
পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সের পুরুষদের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবে প্রোস্টেট ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের পরামর্শ দেওয়া হয়। যাদের পরিবারে প্রোস্টেট ক্যান্সারের ইতিহাস আছে, তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই, তাদের আরো আগে থেকে স্ক্রিনিং শুরু করার প্রয়োজন হতে পারে।
আমাদের দেশে প্রোস্টেট ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের সুবিধা এবং সুযোগ এখনো সীমিত। সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে এর সুবিধা পাওয়া গেলেও, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এই পরীক্ষার খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি।
তাই, স্ক্রিনিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, স্বাস্থ্য পরীক্ষার খরচ এবং আপনার সামর্থ্য বিবেচনা করা প্রয়োজন।
যাদের প্রোস্টেট ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, তাদের জন্য সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব।
কোনো ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে, দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
প্রোস্টেট ক্যান্সার একটি মারাত্মক রোগ, তবে সচেতনতা ও সময় মতো চিকিৎসার মাধ্যমে এর মোকাবিলা করা সম্ভব। তাই, প্রত্যেক পুরুষের উচিত নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া।
তথ্য সূত্র: সিএনএন