সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে স্বাস্থ্য এবং শরীরের ধারণা নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা হয়। সম্প্রতি, জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম টিকটক (TikTok) একটি বিতর্কিত প্রবণতা, “#স্কিনিকটক” (SkinnyTok) -এর অনুসন্ধান বন্ধ করে দিয়েছে।
ইউরোপীয় নিয়ন্ত্রকদের আপত্তির কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, কারণ এই ট্রেন্ডে অতিরিক্ত রোগা হওয়ার প্ররোচনা দেওয়া হচ্ছিল, যা স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
আসলে, “#স্কিনিকটক”-এর মূল বিষয় ছিল অতিরিক্ত ওজন কমানোর চেষ্টা করা এবং শরীরের আকারকে আদর্শ হিসেবে তুলে ধরা। এই ট্রেন্ডে অংশগ্রহণকারীরা প্রায়ই তাদের “স্কিনি গার্ল হ্যাকস” (skinny girl hacks) শেয়ার করতেন, যেখানে কম ক্যালোরির খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হতো।
এই ধরনের ভিডিওগুলো তরুণ প্রজন্মের মধ্যে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে, কিন্তু এর মাধ্যমে খাদ্যাভ্যাস সংক্রান্ত গুরুতর সমস্যা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের প্রবণতা শরীরের স্বাস্থ্য এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। পুষ্টিবিদ এমিলি ভ্যান এক (Emily Van Eck) এই বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, “রোগা হওয়াকে নৈতিকতা, স্বাস্থ্য বা শৃঙ্খলার মাপকাঠি হিসেবে তুলে ধরা শারীরিক, মানসিক এবং আবেগিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
খাদ্যাভ্যাস সংক্রান্ত সমস্যা (eating disorders)-এর সঙ্গে জড়িত ঝুঁকিগুলোও এতে বাড়ে।
অন্যদিকে, একজন খাদ্য ও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লিন্ডসি মিক (Lindsie Meek) এই ট্রেন্ডকে শরীরের ভুল ধারণার প্রসারক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেন, “দিনের বেলা কী খাচ্ছি, সেই ধরনের কন্টেন্টগুলো খুবই ক্ষতিকর, কারণ এতে সব ধরনের শরীরের জন্য একই ধরনের পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে দেখানো হয়।
এই ধরনের পোস্টে শরীরের গঠন, স্বাস্থ্য এবং জিনগত বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয় না।
চিকিৎসকদের মতে, অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণের সীমাবদ্ধতা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কম ক্যালোরির খাবার খাওয়ার ফলে শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব দেখা দিতে পারে, যা ক্লান্তি, মন খারাপ, ঘুমের সমস্যা এবং পেশি দুর্বলতার মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্যের দিক থেকেও এটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে, যা খাদ্যের প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ এবং শরীরের আকারের প্রতি অতিরিক্ত উদ্বেগ তৈরি করতে পারে।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য শরীরের সঠিক ওজন বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ, তবে রোগা হওয়াটাই স্বাস্থ্যকর জীবনের একমাত্র মাপকাঠি নয়। স্বাস্থ্য মানে শারীরিক, মানসিক, আবেগিক এবং সামাজিক সুস্থতা।
তাই, শরীরের আকারের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
যদি কোনো বিষয়ে সন্দেহ হয়, তবে খাদ্যাভ্যাসের কারণে দৈনন্দিন জীবনে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কিনা, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোনো পরিকল্পনা থেকে বিচ্যুত হলে যদি উদ্বেগ হয়, খাবার খাওয়ার জন্য যদি অন্য কিছু বাদ দিতে হয়, অথবা শরীর ও খাদ্য নিয়ে যদি অতিরিক্ত চিন্তা আসে, তাহলে বুঝতে হবে সমস্যা আছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত এই ধরনের তথ্যের প্রতি সচেতন থাকা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের দিকে মনোযোগী হওয়া জরুরি।
তথ্য সূত্র: হেলথলাইন (Healthline)