আমিষ: স্বাস্থ্যকর জীবনের চাবিকাঠি, নাকি অতিরিক্ত?
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমিষ বা প্রোটিনের গুরুত্ব অপরিসীম। শরীরকে সুস্থ রাখতে, পেশি গঠনে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এর জুড়ি নেই। শরীরকে সচল রাখতে প্রয়োজনীয় শক্তির জন্যেও আমিষ অপরিহার্য।
বাজারে প্রায়ই শোনা যায়, বেশি আমিষ খেলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং দ্রুত পেশি তৈরি হয়। বিশেষ করে শরীরচর্চা এবং পেশি গঠন বিষয়ক আলোচনাগুলোতে এই ধারণা বেশ প্রচলিত। কিন্তু সত্যিই কি বেশি আমিষ গ্রহণ করা সবসময় ভালো? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে, আমাদের আমিষের প্রয়োজনীয়তা এবং এর অতিরিক্ত গ্রহণের সম্ভাব্য খারাপ দিকগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে।
আমিষ : প্রয়োজনীয়তা এবং উপকারিতা
আমিষ শরীরের কোষ এবং কলা গঠনে সাহায্য করে। হরমোন তৈরি, উৎসেচক (enzymes) তৈরি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও এর ভূমিকা রয়েছে। শরীরের ক্ষয় পূরণ এবং নতুন কোষ তৈরিতেও আমিষ সহায়তা করে।
খেলোয়াড় এবং শরীরচর্চা করেন এমন ব্যক্তিদের জন্য আমিষ গ্রহণ খুবই জরুরি, কারণ এটি পেশি গঠনে সহায়তা করে।
অতিরিক্ত আমিষ গ্রহণের ক্ষতিকর দিক
যদিও আমিষ শরীরের জন্য খুব দরকারি, তবে অতিরিক্ত পরিমাণে এটি গ্রহণ করলে কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। বেশি পরিমাণে আমিষ গ্রহণ করলে, বিশেষ করে যদি তা প্রাণীজ উৎস থেকে আসে, শরীরের উপর বাড়তি চাপ পড়তে পারে।
* কিডনির উপর প্রভাব: অতিরিক্ত আমিষ গ্রহণ করলে কিডনিকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। কারণ, আমিষ হজম করার পর শরীরে যে বর্জ্য তৈরি হয়, তা শরীর থেকে বের করে দেওয়ার জন্য কিডনির উপর চাপ পরে। দীর্ঘ সময় ধরে এই অতিরিক্ত চাপের কারণে কিডনির সমস্যা হতে পারে।
যাদের কিডনির সমস্যা আছে অথবা ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি আরও বেশি। অনেক সময় অতিরিক্ত প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করার কারণেও কিডনির উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হতে পারে।
* অন্যান্য পুষ্টির অভাব: অতিরিক্ত আমিষ গ্রহণ করলে অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করা কঠিন হয়ে পরে। একটি সুষম খাদ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ফল, সবজি, শস্য এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট।
অতিরিক্ত আমিষ গ্রহণের কারণে এইসব প্রয়োজনীয় উপাদান গ্রহণ করা কমে যেতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
* পেটের স্বাস্থ্য: অতিরিক্ত আমিষ, বিশেষ করে প্রাণীজ আমিষ, আমাদের পেটের স্বাভাবিক ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। এর ফলে হজমক্ষমতা কমে যেতে পারে এবং শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে।
এই প্রদাহ দীর্ঘমেয়াদে অন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করতে পারে।
সুষম খাদ্য ও আমিষের সঠিক পরিমাণ
একজন সুস্থ মানুষের জন্য প্রতিদিন কতটা আমিষ গ্রহণ করা উচিত, তা নির্ভর করে তার বয়স, শারীরিক অবস্থা এবং জীবনযাত্রার ধরনের ওপর। সাধারণত, একজন মানুষের প্রতি কেজি ওজনের জন্য ০.৮ গ্রাম আমিষ গ্রহণ করা যথেষ্ট।
তবে, যারা বেশি ব্যায়াম করেন বা পেশি তৈরি করতে চান, তাদের জন্য এই পরিমাণ ১.২ থেকে ১.৭ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। তবে, দৈনিক ২ গ্রামের বেশি আমিষ গ্রহণ করা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
আমিষের উৎস
আমিষের ভালো উৎসগুলো হলো মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার (যেমন দই), এবং বিভিন্ন ধরনের ডাল ও শস্য।
উদ্ভিজ্জ আমিষের মধ্যে মটরশুঁটি, ছোলা, বাদাম, এবং পালং শাক উল্লেখযোগ্য।
উপসংহার
আমিষ আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় একটি উপাদান, তবে এর অতিরিক্ত গ্রহণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজন সুষম খাদ্য এবং আমিষের সঠিক পরিমাণ।
একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করা সবচেয়ে ভালো। মনে রাখতে হবে, বেশি আমিষ গ্রহণ করাই স্বাস্থ্যকর জীবনের চাবিকাঠি নয়, বরং সঠিক পরিমাণে সব ধরনের পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করা প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: Healthline