বিখ্যাত হলিউড অভিনেতা ব্রুস উইলিস-এর জীবনে ২০১৮ সালে নেমে আসে এক কঠিন বাস্তবতা।
ফ্রন্টটেম্পোরাল ডিমেনশিয়া (Frontotemporal Dementia – FTD) নামক এক জটিল রোগে আক্রান্ত হন তিনি।
এই রোগটি শনাক্ত হওয়ার পর ব্রুস ও তাঁর স্ত্রী এমা হেমিং উইলিসের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলো যেনো নিমেষেই বদলে যায়।
সম্প্রতি, লাস ভেগাসে অনুষ্ঠিত ‘উইমেন’স আলঝেইমার’স মুভমেন্ট ফোরাম’-এ এই বিষয়ে কথা বলেন এমা।
ডাক্তারের চেম্বার থেকে একটি পুস্তিকা হাতে নিয়ে তাঁরা ফিরে এসেছিলেন, সাথে ছিলো গভীর এক শূন্যতা।
কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ছিল না, ছিল না কোনো দিকনির্দেশনা অথবা ভরসা।
শুধু ছিল একরাশ হতাশা, জানান এমা।
তিনি বলেন, “আমরা যে ভবিষ্যৎ জীবনের স্বপ্ন দেখেছিলাম, তা যেনো এক মুহূর্তে মিলিয়ে গেল।
আমি তখন আমার পরিবারকে আগলে রাখার চেষ্টা করছিলাম, আমাদের দুই মেয়ের দেখাশোনা করছিলাম, আর ভালোবাসার মানুষটির যত্ন নিচ্ছিলাম, একইসাথে এমন একটি রোগের সঙ্গে লড়ছিলাম যা সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই ছিল না।”
ফ্রন্টটেম্পোরাল ডিমেনশিয়া, যা সাধারণত FTD নামেই পরিচিত, মূলত ৬০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে স্মৃতিভ্রংশের একটি সাধারণ রূপ।
বর্তমানে এই রোগের কোনো চিকিৎসা নেই।
ব্রুস উইলিসের অসুস্থতা এমা-কে একা করে দেয়, তিনি হয়ে পড়েন অসহায় ও ভীত।
ফোরামের মঞ্চে সম্মাননা গ্রহণকালে তিনি বলেন, “তখন আমার কেবল চিকিৎসা বিষয়ক তথ্যের প্রয়োজন ছিল না, এমন একজন মানুষের প্রয়োজন ছিল যিনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলবেন, ‘এই মুহূর্তে হয়তো বিষয়টি অসম্ভব মনে হচ্ছে, তবে তুমি অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
তুমি টিকে থাকবে এবং এর মধ্য দিয়ে আরও শক্তিশালী হবে।
এমা জানান, শুরুতে FTD সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য তাঁর কাছে ছিল না।
তাই তিনি বিষয়টির গভীরে যান এবং গবেষণা শুরু করেন।
এই অভিজ্ঞতাগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে তিনি একটি বই লিখছেন, যার নাম ‘দ্য আনএক্সপেক্টেড জার্নি’।
বইটিতে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং কিভাবে অন্যদের সাহায্য করতে পারেন, সে সম্পর্কে আলোকপাত করবেন।
ব্রুস উইলিসের মতো একজন বিশ্বখ্যাত তারকার স্ত্রী হওয়ার সুবাদে এমা বিশেষজ্ঞ এবং উন্নত সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন।
তিনি মনে করেন, এই অভিজ্ঞতা অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া উচিত।
কারণ তাঁর মতে, “আমার একটি বিশাল কণ্ঠস্বর আছে এবং অন্যদের তুলনায় আমার সম্পদও বেশি।”
গত তিন বছর ধরে, FTD সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এমা বিভিন্ন আইন এবং প্রচারণায় সহায়তা করেছেন।
তিনি মনে করেন, “আমি একা এই কাজটি করছি না, বরং আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি এবং ধীরে ধীরে উন্নতি করছি।”
এমা আরও বলেন, “২০২২ সালে আমি আমার ভবিষ্যৎ জীবনটা এভাবে দেখিনি।
আমি এই পথ বেছে নিইনি, তবে ব্রুসের মতোই আমি সবসময় আমার জীবনকে অর্থপূর্ণভাবে অতিবাহিত করার চেষ্টা করি এবং আশা করি আমাদের মেয়েরাও সেভাবেই বাঁচবে।”
দীর্ঘদিন ধরে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা মারিয়া শ্রিভার মনে করেন, যত্ন নেওয়ার বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা পুরো দেশকে একত্রিত করতে পারে।
তাঁর মতে, “এই বিষয়টি রাজনীতি বা দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে।
আমাদের বোঝা উচিত কেন এই বিষয়গুলো সময়ের রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে বিবেচিত হয় না, যেখানে এটি প্রতিটি পরিবারকে প্রভাবিত করে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “কেন আমরা পরিচর্যা বা নারী স্বাস্থ্য নিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করি না?
কেন আমরা সহজেই এটি সমাধান করতে পারছি না?
কারণ এটি এমন একটি বিষয় যা নিয়ে আমাদের মধ্যে ঐকমত্য থাকতে পারে।
এই বিষয়গুলো নিয়ে পরিবারগুলোতে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ চলছে।
আমরা এই যুদ্ধ সমাধান করতে পারি।
শান্তি এখানেই আসে এবং আমি বিশ্বাস করি, এই বিষয়গুলোই আমাদের একত্রিত করতে পারে।
এমা হেমিং উইলিস যোগ করেন, “আমাদের এই বিষয়ে আরও বেশি কথা বলা উচিত, কারণ কোনো না কোনো সময়ে আমরা হয় প্রিয়জনের যত্ন নেব, না হয় আমাদের নিজেদেরই যত্নের প্রয়োজন হবে।
তাই, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা, যা আশা করি একদিন সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।
তথ্য সূত্র: People