গাজায় মার্কিন-সমর্থিত নতুন ত্রাণ বিতরণের কড়া সমালোচনা করলেন জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থার প্রধান। তিনি একে ‘নৃশংসতা থেকে দৃষ্টি সরানোর কৌশল’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
মঙ্গলবার রাফাহ শহরে একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়, যেখানে খাদ্য সংগ্রহের জন্য হাজার হাজার ফিলিস্তিনি মানুষ জড়ো হয়েছিল। নতুন এই ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা নিয়ে ইতোমধ্যেই বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরওয়া’র প্রধান ফিলিপ লাজারিনি জাপানের ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বলেন, ‘আমি মনে করি, এটি (নতুন ব্যবস্থা) সম্পদ নষ্ট করার শামিল এবং গাজায় চলমান নৃশংসতা থেকে মনোযোগ সরানোর একটি চেষ্টা।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমাদের কাছে ইতোমধ্যেই ত্রাণ বিতরণের উপযুক্ত একটি ব্যবস্থা বিদ্যমান।’
মঙ্গলবার রাফাহ শহরে ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ) নামক একটি সংস্থার ত্রাণ বিতরণের সময় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, এই সংস্থার কার্যক্রমের পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন। স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ওই ঘটনায় অন্তত একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং বহু মানুষ আহত হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক অফিসের প্রধান অজিত সাংঘে জানান, ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে আহত হয়েছেন ৪৭ জন ফিলিস্তিনি।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও পরে স্বীকার করেছেন যে, ওই কেন্দ্রে ‘কিছুটা নিয়ন্ত্রনহীন পরিস্থিতি’ তৈরি হয়েছিল। তবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই ত্রাণ বিতরণকে ‘সাফল্য’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা জিএইচএফের কার্যক্রমকে সহায়তা করছে এবং তাদের লক্ষ্য হলো হামাসের হাত থেকে ত্রাণ সামগ্রী সরিয়ে রাখা।
তবে জিএইচএফের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের বাদ দিয়ে ইসরায়েলের সামরিক উদ্দেশ্য পূরণে সহায়তা করা এবং জাতিসংঘের নিয়ম লঙ্ঘন করার অভিযোগ উঠেছে। জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো এই ফাউন্ডেশনকে বয়কট করেছে।
তাদের মতে, এটি মানবিক ত্রাণ বিতরণের মূল নীতির পরিপন্থী, যেখানে বিতরণের ক্ষেত্রে সংঘাতের কোনো পক্ষের প্রভাব থাকার সুযোগ নেই।
ইউএনআরওয়া প্রধান লাজারিনি বুধবার বলেন, ‘ইসরায়েল প্রস্তাবিত ত্রাণ বিতরণের এই মডেল মানবিক নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এটি গাজার অসহায় মানুষদের প্রয়োজনীয় সহায়তা থেকে বঞ্চিত করবে।’ তিনি আরও জানান, আগে গাজায় প্রায় ৪০০টি বিতরণ কেন্দ্র ছিল, কিন্তু নতুন এই ব্যবস্থায় তা কমিয়ে মাত্র ৩-৪টিতে আনা হয়েছে।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘এটি সম্ভবত মানবিক সহায়তা পাওয়ার জন্য মানুষকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার একটি কৌশল।’
এদিকে, গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণ এখনো অব্যাহত রয়েছে।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৯শে মার্চের যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৩,৯০১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
মঙ্গলবার উত্তর গাজার আস-সাফতাউই এলাকায় সাংবাদিক ওসামা আল-আরবিদের বাড়িতে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালালে তিনি গুরুতর আহত হন। এছাড়া বুধবার ভোর থেকে গাজাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় আরও ১৫ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৮ই মার্চ থেকে এ পর্যন্ত গাজায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩,৮২২। এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর উদ্বেগ বাড়ছে, কারণ ত্রাণ বিতরণের এই নতুন মডেল গাজার মানবিক পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা