বিলাসিতার নতুন সংজ্ঞা: ফার্ম-বেজড রিসোর্ট, যেখানে রাত কাটানোর খরচ কয়েক লক্ষ টাকা!
আজকাল বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের মধ্যে নতুন ধরনের ভ্রমণের চাহিদা বাড়ছে। প্রকৃতির কাছাকাছি, শান্ত পরিবেশে কয়েক দিন কাটানোর প্রবণতা বাড়ছে, যেখানে আধুনিক জীবনের কোলাহল থেকে দূরে থাকা যায়। এই ধারণার সাথে সঙ্গতি রেখে, বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা লাভ করছে বিলাসবহুল ফার্ম-বেজড রিসোর্ট।
যেখানে সাধারণ খামার জীবনের কঠিন পরিশ্রমের পরিবর্তে, আরাম ও প্রকৃতির এক অপূর্ব মিশ্রণ উপভোগ করার সুযোগ থাকে।
সাধারণত, এই ধরনের রিসোর্টগুলিতে এক রাতের জন্য প্রায় ১,০০০ থেকে ৩,০০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত খরচ হয়, যা বাংলাদেশি টাকায় কয়েক লক্ষ টাকার সমান। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে, অতিথিরা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার সুযোগ পান, যেখানে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত খাদ্য উপভোগ করা যায় এবং খামার জীবনের অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসির ব্ল্যাকবেরি ফার্ম (Blackberry Farm), পর্তুগালের সাও লরেন্সো ডু বারোকাল (São Lourenço do Barrocal), মেক্সিকোর ফ্লোরা ফার্মস (Flora Farms), এবং পুয়ের্তো রিকোর মনকায়ো (Moncayo)-এর মতো রিসোর্টগুলো এরই উদাহরণ। এই স্থানগুলোতে অতিথিরা মাছ ধরা, অশ্বারোহণ, অথবা বিশাল ওয়াইন সেলারের মত সুযোগ সুবিধা উপভোগ করেন।
মনকায়োতে, একটি বিশাল খামার এবং গলফ কোর্সের পাশাপাশি, অতিথিদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা ও বাসস্থান তৈরি করা হচ্ছে।
এই বিলাসবহুল জীবনযাত্রার ধারণাটি বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। বিশেষ করে, যারা নিজেদের ‘হোমস্টেডিং’ করেন, তাদের ছবি এবং ভিডিওগুলি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। উদাহরণস্বরূপ, জনপ্রিয় ‘ইনফ্লুয়েন্সার’ হান্না নীলম্যান (Hannah Neeleman)-এর কথা বলা যায়, যিনি তাঁর আট সন্তানের সাথে একটি খামারে বসবাস করেন এবং প্রায়শই তাঁর বাগানে উৎপাদিত সবজি তোলার ছবি পোস্ট করেন।
শুধু সাধারণ মানুষই নন, অনেক সেলিব্রিটিও এই ধরনের জীবনযাত্রার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। অভিনেত্রী বেলা ও জিজি হাদিদ (Gigi and Bella Hadid)-এর একটি পারিবারিক খামার রয়েছে, যেখানে তাঁরা প্রায়ই সময় কাটান। এছাড়া, অভিনেতা লেনি ক্রাভিটজ-এর ব্রাজিলের একটি খামারের ছবিও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
অন্যান্য সেলিব্রিটিদের মধ্যে ব্রাই লারসন ও শেইলেন উডলি-র নামও উল্লেখযোগ্য।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মানুষের মধ্যে প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার এই আগ্রহের কারণ হল— কর্মব্যস্ত জীবন থেকে মুক্তি এবং মানসিক শান্তির জন্য একটি উপায় খুঁজে বের করা। পর্যটকদের মধ্যে এখন এমন ভ্রমণের চাহিদা বাড়ছে, যেখানে তাঁরা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে পারেন এবং একই সাথে সুস্থ জীবনযাপনের একটি অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারেন।
এই ধরনের পর্যটন, যা ‘এগ্রিট্যুরিজম’ নামে পরিচিত, বর্তমানে একটি বিশাল শিল্পে পরিণত হয়েছে। ২০১৯ সালে এর বাজার ছিল প্রায় ৬৯.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০৩২ সাল নাগাদ ১৯১.৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
বিভিন্ন ধরনের খামার, বাগান, এবং ওয়াইনারিগুলোতে এখন পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ে।
এগ্রিট্যুরিজমের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির পেছনে কোভিড-১৯ অতিমারীর একটি বড় ভূমিকা ছিল। মানুষ যখন শহরের বাইরে, প্রকৃতির কাছাকাছি, নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান করছিল, তখন এই ধরনের রিসোর্টগুলি জনপ্রিয়তা লাভ করে।
বাংলাদেশেও প্রকৃতির কাছাকাছি, শান্ত পরিবেশে ভ্রমণের চাহিদা বাড়ছে। যদিও বিলাসবহুল ফার্ম-বেজড রিসোর্ট এখনো সেভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করেনি, তবে ইকো-রিসোর্ট এবং গ্রামীণ পর্যটনের ধারণা ধীরে ধীরে প্রসারিত হচ্ছে।
ভবিষ্যতে, এই ধরনের ভ্রমণের চাহিদা আরও বাড়বে বলে মনে করা হয়, যেখানে মানুষ প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে মানসিক শান্তি খুঁজে পাবে এবং একই সাথে স্থানীয় সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার সাথে পরিচিত হতে পারবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন