মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘নো কিংস’ প্রতিবাদের ঢেউ: গণতন্ত্র, অভিবাসন ও সামরিক ব্যয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হাজারো মানুষ
যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি ‘নো কিংস’ (“কোনো রাজা নয়”) শিরোনামে ব্যাপক প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে, বিশেষ করে গণতন্ত্রের অবক্ষয়, অভিবাসন নীতি এবং সামরিক খাতে ব্যয়ের প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। নিউ ইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, আটলান্টা, ফিলাডেলফিয়া ও হিউস্টনের মতো শহরগুলোতে হাজার হাজার মানুষ এতে অংশ নেন। বিক্ষোভকারীরা তাদের উদ্বেগের কথা জানাতে বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার ব্যবহার করেন।
গণতন্ত্রের প্রশ্নে প্রতিবাদ :
বিক্ষোভকারীদের প্রধান উদ্বেগের বিষয় ছিল গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ। তারা মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসনের ক্ষমতা বিস্তারের চেষ্টা গণতন্ত্রের ভিত্তিকে দুর্বল করে দিচ্ছে। প্রতিবাদকারীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। বিক্ষোভকারীরা আমেরিকার সংবিধানে বর্ণিত জনগণের সার্বভৌমত্বের ধারণাটি সমুন্নত রাখতে চান।
অভিবাসন নীতি নিয়ে বিতর্ক :
অভিবাসন নীতি নিয়েও প্রতিবাদকারীরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিশেষ করে, অভিবাসন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা (আইস)-এর কার্যক্রমের তীব্র সমালোচনা করা হয়। অনেকে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রতি সংহতি জানান। তারা মনে করেন, অভিবাসীদের প্রতি সরকারের আচরণ মানবিক হওয়া উচিত।
সামরিক ব্যয় ও অন্যান্য বিষয় :
বিক্ষোভকারীরা সামরিক খাতে অতিরিক্ত ব্যয়েরও সমালোচনা করেন। তাদের মতে, এই বিপুল পরিমাণ অর্থ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় করা যেত। এছাড়া, বিক্ষোভকারীরা পরিবেশ বিষয়ক নীতি এবং সামাজিক পরিষেবা খাতে কাটছাঁট নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ :
লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীরা ‘নো কিংস’ কর্মসূচিতে যোগ দেন। ফিলাডেলফিয়ায়, আমেরিকার স্বাধীনতা ঘোষণার ঐতিহাসিক স্থানে, গণতন্ত্রের পক্ষে স্লোগান দেওয়া হয়। আটলান্টায় বিক্ষোভকারীরা আমেরিকার পতাকা হাতে নিয়ে ‘নো কিংস ইন আমেরিকা’ (“আমেরিকায় কোনো রাজা নেই”) ধ্বনি তোলেন। হিউস্টনে সামাজিক পরিষেবা এবং দুর্বল জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষার দাবি জানানো হয়।
প্রতিবাদকারীদের ভাষ্য :
বিভিন্ন শহরে অনুষ্ঠিত এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতার কথা জানান। একজন প্রবীণ শিক্ষক, জর্জ অ্যাটকিনসন, ফ্যাসিবাদ বিরোধীতার কথা উল্লেখ করে বলেন, “আমরা সবাই রাজা, তিনি (ট্রাম্প) নন।” নিউইয়র্কের স্টিফেন নুনেজ বলেন, “গণতন্ত্র ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ছে।” লস অ্যাঞ্জেলেসের ডেবি হোয়ালি বলেন, “আমি রাজার দেশ থেকে এসেছি, এখানে আর একজন রাজা চাই না।”
উপসংহার :
যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ‘নো কিংস’ প্রতিবাদ কর্মসূচি গণতন্ত্র, অভিবাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করেছে। এই প্রতিবাদগুলো বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র ও সুশাসনের গুরুত্বের বিষয়টি আরও একবার তুলে ধরেছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন