বসন্তের শুরুতেই ঘড়ির কাঁটা এক ঘণ্টা এগিয়ে নেওয়ার রীতিটি বিশ্বের অনেক দেশে প্রচলিত আছে। এই পরিবর্তনের ফলে ঘুমের ধরনে আসে পরিবর্তন, যা স্বাস্থ্যের উপর ফেলতে পারে মারাত্মক প্রভাব। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঘড়ির কাঁটা পরিবর্তনের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ে।
আসলে, মানুষের শরীরের নিজস্ব একটি অভ্যন্তরীণ ঘড়ি বা সার্কেডিয়ান রিদম (Circadian Rhythm) রয়েছে, যা ঘুমের সময় নির্ধারণ করে। দিনের আলো এবং রাতের অন্ধকার এই রিদমকে নিয়ন্ত্রণ করে। যখন দিনের আলো কমে যায়, তখন শরীর ঘুমের জন্য প্রস্তুত হতে শুরু করে। কিন্তু ঘড়ির কাঁটা পরিবর্তনের ফলে এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। বিশেষ করে সকালে পর্যাপ্ত আলো না পাওয়ার কারণে শরীরে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে এবং হৃদরোগের সম্ভবনা বাড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। সেখানে, দিনের আলো দীর্ঘ করার জন্য ঘড়ি এক ঘণ্টা এগিয়ে নেওয়া হয়, যাকে ডেলাইট সেভিং টাইম (Daylight Saving Time) বলা হয়। এই পরিবর্তনের ফলে মানুষের ঘুমের সময় কমে যায়, কারণ সকালে দেরিতে ঘুম ভাঙে। এর ফলস্বরূপ, মানুষের শরীরে ক্লান্তি ও মানসিক চাপ বাড়ে। এমনকি, গাড়ি দুর্ঘটনার সংখ্যাও বেড়ে যায়, কারণ ঘুমের অভাব মানুষকে অমনোযোগী করে তোলে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেলাইট সেভিং টাইমের সময় শরীরের এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, ঘুমাতে যাওয়ার আগের কয়েক দিন ধীরে ধীরে ঘুমের সময় পরিবর্তন করা। যেমন, প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ মিনিট আগে ঘুমাতে যাওয়া এবং সকালে ঘুম থেকে ওঠা। এছাড়া, সকালে কিছু সময়ের জন্য সূর্যের আলোতে থাকার চেষ্টা করা যেতে পারে। এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়িকে পুনরায় সেট করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও, ঘুমানোর আগে মোবাইল ফোন বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক গ্যাজেট ব্যবহার করা উচিত না। কারণ, এদের আলো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। অতিরিক্ত ক্যাফিন গ্রহণ এবং দিনের বেলা ঘুম (ন্যাপ) ঘুমের সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে ডেলাইট সেভিং টাইম নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অনেকে চান, এই সময় পরিবর্তনের রীতি বাতিল করা হোক। তবে, আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (American Medical Association) এবং আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ স্লিপ মেডিসিন (American Academy of Sleep Medicine) এর মতো স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো বলছে, সময় পরিবর্তনের পরিবর্তে সারা বছর স্ট্যান্ডার্ড টাইম অনুসরণ করা উচিত। কারণ, এটি মানুষের স্বাভাবিক ঘুমের জন্য সহায়ক।
যদিও বাংলাদেশে ডেলাইট সেভিং টাইমের প্রচলন নেই, তবে ঘুমের গুরুত্ব এখানেও অপরিসীম। নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বজায় রাখা সকলের জন্য জরুরি। কারণ, এটি কেবল শারীরিক স্বাস্থ্যই নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস (Associated Press)