যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেছিলেন। তার এই শুল্ক নীতির কারণগুলো বিশ্লেষণ করা হলো, যা বাণিজ্য থেকে শুরু করে জাতীয় সুরক্ষার মতো বিষয়গুলির সঙ্গে জড়িত।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায়ই বলতেন, শুল্ক হলো তার কাছে ‘ডিকশনারির সবচেয়ে সুন্দর শব্দ’। তিনি মনে করতেন, আমদানি শুল্ক আমেরিকার অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারে এবং দেশকে উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। যদিও অর্থনীতিবিদদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন, আমদানি শুল্ক শুধু বাণিজ্য ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু ট্রাম্পের দেওয়া অন্যান্য সুবিধার সঙ্গে তাঁরা একমত নন।
ট্রাম্প মেক্সিকো, কানাডা এবং চীনের মতো দেশের পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের পক্ষে বেশ কয়েকটি কারণ দেখিয়েছেন:
- বাণিজ্য ভারসাম্য ও উৎপাদন বৃদ্ধি: ট্রাম্পের মতে, শুল্কের হুমকি দেওয়ার ফলে আমেরিকার অটোমোবাইল শিল্পে উৎপাদন বেড়েছে। তিনি বিভিন্ন সময় বলেছেন, “কারখানাগুলো এখানে ওখানে খুলছে।” এমনকি প্রস্তুতকারকদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, “যদি তোমরা আমেরিকায় তোমাদের পণ্য তৈরি না করো, তবে ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে তোমাদের শুল্ক দিতে হবে, এবং কিছু ক্ষেত্রে তা বেশ বড় হবে।” যদিও অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায়, মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর নতুন শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে এক মাসের জন্য ছাড় দিয়েছেন ট্রাম্প।
- অবৈধ অভিবাসন ও মানব পাচার বন্ধ করা: অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করা ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার ছিল। তিনি কানাডা ও মেক্সিকোর উপর শুল্ক আরোপের পেছনে এই কারণ দেখিয়েছেন। সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণে তিনি দেশ দুটিকে শুল্ক আরোপের হুমকি থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতিও দিয়েছিলেন।
- ফেন্টানিলের প্রবেশ বন্ধ করা: ট্রাম্প কানাডা, মেক্সিকো ও চীন থেকে অবৈধভাবে ফেন্টানিলের প্রবেশ বন্ধ করার যুক্তিও দেখিয়েছেন। যদিও আমেরিকার দক্ষিণা সীমান্ত দিয়ে ফেন্টানিলের অনুপ্রবেশ বেশি, তবে তিনি শুল্ক আরোপের কারণ হিসেবে এটিকে তুলে ধরেন।
- বাজেট ব্যালেন্স করা: ট্রাম্পের মতে, শুল্ক ফেডারেল বাজেটকে স্থিতিশীল করতে সহায়ক হবে। তিনি বলেছিলেন, “আমরা দ্রুত বাজেট ব্যালেন্স করার চেষ্টা করছি, এবং শুল্ক থেকে প্রাপ্ত আয় সত্যিই অসাধারণ হচ্ছে।”
- ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করা: ট্রাম্পের মতে, পারস্পরিক শুল্ক আরোপের মাধ্যমে তিনি সকলের প্রতি ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করতে চান। তিনি বলেছিলেন, “আমি ন্যায্যতার স্বার্থে পারস্পরিক শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে কেউ অভিযোগ করতে পারবে না।”
- অন্যান্য দেশের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া: ট্রাম্পের মতে, অন্যান্য দেশগুলো যদি আমেরিকার পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করে, তবে তারাও একই কাজ করবে।
- জাতীয় নিরাপত্তা শক্তিশালী করা: ট্রাম্প জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য তামা, কাঠ ও কাঠের মতো পণ্যের উপর শুল্ক আরোপের নির্দেশ দিয়েছেন।
- শিশু যত্নের খরচ কমানো: ট্রাম্পের মতে, শুল্কের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে শিশু যত্নের খরচ কমানো সম্ভব।
- আমেরিকাকে ধনী করা: ট্রাম্প বেশ কয়েকবার বলেছেন, শুল্ক থেকে সংগৃহীত রাজস্ব দেশকে ধনী করবে।
- দেশের আত্মার সুরক্ষা: ট্রাম্পের মতে, শুল্ক কেবল আমেরিকান শ্রমিকদের রক্ষা করে না, বরং দেশের আত্মাকেও রক্ষা করে।
তবে, অর্থনীতিবিদরা ট্রাম্পের এই যুক্তির সঙ্গে একমত নন। তারা মনে করেন, শুল্ক আরোপের ফলে মার্কিন ব্যবসা ও ভোক্তাদের জন্য পণ্যের দাম বাড়তে পারে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস