মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বৃহৎ খুচরা বিক্রেতা সংস্থা টার্গেটের বিরুদ্ধে ৪০ দিনের একটি বর্জন কর্মসূচি শুরু হয়েছে, যা বর্তমানে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
এই প্রতিবাদ কর্মসূচিটির মূল কারণ হলো, টার্গেট তাদের ‘বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তি’ (Diversity, Equity, and Inclusion – DEI) বিষয়ক কিছু পদক্ষেপ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বর্জন কর্মসূচিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন আটলান্টার নিউ বার্থ মিশনারি ব্যাপটিস্ট চার্চের সিনিয়র যাজক রেভারেন্ড জামাল ব্রায়ান্ট।
জানা গেছে, গত বুধবার থেকে, যা লেন্ট বা উপবাসের প্রথম দিন, এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে।
এর সঙ্গে সমর্থন জুগিয়েছেন বিভিন্ন ধর্মীয় ও নাগরিক অধিকার বিষয়ক নেতৃবৃন্দ।
অংশগ্রহণকারীদের জন্য তৈরি করা ওয়েবসাইটে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের আর্থিক সামর্থ্যের বিষয়টি তুলে ধরে এই বর্জন কর্মসূচিকে ‘প্রতিরোধের আধ্যাত্মিক পদক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
ওয়েবসাইটটিতে আরও বলা হয়েছে, “এটি জবাবদিহিতার জন্য একটি উপবাস।
এটি ন্যায়বিচারের জন্য, এমন একটি ভবিষ্যতের জন্য যেখানে কর্পোরেশনগুলো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকারের প্রশ্নে নতি স্বীকার করবে না।”
টার্গেট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সরাসরি এই বর্জন কর্মসূচি নিয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
তবে তারা জানিয়েছে, এই কর্মসূচি আগামী ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে।
মূলত, ডিইআই বিষয়ক কার্যক্রমগুলো বাতিল করার কারণেই এই বিতর্কের সূত্রপাত।
ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত টার্গেট তাদের কর্মীদের মধ্যে কৃষ্ণাঙ্গ কর্মীদের উন্নয়নের জন্য এবং কৃষ্ণাঙ্গ মালিকানাধীন ব্যবসায় সহায়তা করার জন্য কিছু কর্মসূচি চালু রেখেছিল।
কিন্তু পরবর্তীতে তারা জানায়, এই বছর থেকে তারা ধীরে ধীরে এই কার্যক্রমগুলো গুটিয়ে নেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২ হাজার স্টোর এবং ৪ লক্ষাধিক কর্মী নিয়ে গঠিত এই কোম্পানির এমন সিদ্ধান্তের পরেই সমালোচনার ঝড় ওঠে।
অনেকেই মনে করছেন, টার্গেটের এমন পদক্ষেপ তাদের গ্রাহকদের মধ্যে ভুল বার্তা দিয়েছে।
যদিও টার্গেটের প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়ালমার্টও একই ধরনের ডিইআই বিষয়ক কিছু কার্যক্রম বাতিল করেছে, তবে টার্গেটের এই পদক্ষেপ গ্রাহকদের মধ্যে বেশি ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
এমনকি টার্গেটের সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভও হয়েছে।
বর্জন কর্মসূচির উদ্যোক্তারা এই সময়ে টার্গেটে কেনাকাটা বন্ধ করে কৃষ্ণাঙ্গ মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অর্থ ব্যয় করার জন্য মানুষকে উৎসাহিত করছেন।
এই কর্মসূচির মূল দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, টার্গেটকে ডিইআই বিষয়ক প্রতিশ্রুতিগুলো পুনর্বহাল করতে হবে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে কৃষ্ণাঙ্গ মালিকানাধীন ব্যবসায় ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের আগের অঙ্গীকার রক্ষা করতে হবে।
বর্তমানে, এই বর্জন কর্মসূচির প্রভাব কেমন হবে, তা বলা কঠিন।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হওয়ার ঝুঁকি থাকে, বিশেষ করে যখন কোনো কোম্পানি তাদের আগের কথার বরখেলাপ করে।
বর্জন কর্মসূচি সফল করতে হলে, এতে অংশগ্রহণের জন্য বিভিন্ন উপায় তৈরি করতে হবে।
যেমন, টার্গেট বা ওয়ালমার্টের মতো বৃহৎ চেইন শপগুলো এড়িয়ে স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পণ্য কেনার বিষয়টি উৎসাহিত করা যেতে পারে।
এই বর্জন কর্মসূচি কতটা সফল হবে, তা সময় বলবে।
তবে এটি নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা কর্পোরেট জগতের নীতি-নির্ধারণ এবং গ্রাহকদের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করবে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস