গুয়ানতানামো বে-তে কাটানো ১৬ দিন, এরপর দেশে ফেরা: যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতির শিকার এক ভেনেজুয়েলার যুবকের গল্প।
এক সময়ের সমৃদ্ধ শহর, ভেনেজুয়েলার মারাকাইবো’র (Maracaibo) রাস্তায় এখন শুধুই পরিত্যক্ত দোকান আর খালি বাড়ি। এখানকারই বাসিন্দা ২৫ বছর বয়সী জোয়ান বাস্টিদাস (Jhoan Bastidas)।
একসময় পরিবারের সঙ্গে ভালো জীবন কাটানোর স্বপ্ন নিয়ে দেশ ছেড়েছিলেন তিনি। কিন্তু সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত হয়ে, ১৬ দিন কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে-তে বন্দী থাকার পর তিনি আবার ফিরে এসেছেন নিজের জন্মভূমিতে। বাস্টিদাসের এই গল্প, মূলত যুক্তরাষ্ট্রের বিতর্কিত অভিবাসন নীতির এক কঠিন বাস্তবতাকে তুলে ধরে।
২০১৮ সালে বাস্টিদাস ও তাঁর পরিবার ভেনেজুয়েলা ছেড়ে পেরু এবং পরে কলম্বিয়ায় পাড়ি জমায়। বাস্টিদাসের ভাষায়, তখন ভেনেজুয়েলার অবস্থা ছিল খুবই খারাপ।
২০১৮ সাল ছিল দেশটির ইতিহাসের অন্যতম সংকটপূর্ণ সময়। তেল নির্ভর অর্থনীতি ভেঙে পড়ার কারণে কাজ হারানো মানুষের দীর্ঘ লাইন, দোকানে জিনিসপত্রের অভাব, ক্ষুধার যন্ত্রণা—এসব ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। এক কথায়, জীবন ধারণের মতো পরিস্থিতি ছিল না সেখানে।
এরই মধ্যে, ২০২১ সালে বাস্টিদাস যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নেন। টেক্সাসে পৌঁছে তিনি আত্মসমর্পণ করেন এবং অভিবাসন কর্তৃপক্ষের হেফাজতে যান।
এরপর তাঁর জীবন নতুন মোড় নেয়। হঠাৎ একদিন তাঁকে জানানো হয়, তিনি কোথায় যাচ্ছেন, সে বিষয়ে কোনো ধারণা না দিয়ে, বিমানে তুলে নেওয়া হয়। বিমানটি যখন গুয়ানতানামো বে-তে অবতরণ করে, তখন বাস্টিদাস সম্পূর্ণ হতবাক হয়ে যান। কারণ, গুয়ানতানামো বে সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণাই ছিল না।
গুয়ানতানামোর একটি ছোট কক্ষে বন্দী অবস্থায় বাস্টিদাস দিনের আলো দেখার সুযোগ পেতেন খুবই কম। সেখানকার সংকীর্ণ কক্ষে, যেখানে একটি জানালাও ছিল, বাইরের জগৎ ছিল তাঁর কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত।
বাস্টিদাস জানান, সামান্য একটি কাঁচের ফাঁক দিয়ে তিনি সূর্যের আলো দেখতেন। এমনকি, সামান্য শরীরচর্চার সুযোগটুকুও তাঁর কপালে জুটত না।
বন্দী অবস্থায় বাস্টিদাস এবং তাঁর সঙ্গীরা বাইবেল পাঠ করে এবং প্রার্থনা করত। বাস্টিদাস বলেন, “আমরা বিশ্বাস করতাম, সৃষ্টিকর্তাই আমাদের এই অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারেন। কারণ, আমাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো আর কেউ ছিল না।”
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) অভিবাসন নীতির কড়া সমালোচক ছিল মানবাধিকার সংগঠনগুলো। ট্রাম্প প্রশাসন অভিযোগ করে আসছিল, বাস্টিদাসসহ আরও অনেক ভেনেজুয়েলার নাগরিক ‘ট্রেন দে আরাগ’ গ্যাংয়ের সদস্য।
এই গ্যাংয়ের উৎপত্তিস্থল হলো ভেনেজুয়েলা। যদিও এই অভিযোগের স্বপক্ষে তারা কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। বাস্টিদাস নিজেও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, শরীরে আঁকা ট্যাটুর কারণেই হয়তো কর্তৃপক্ষ তাঁকে ভুলভাবে চিহ্নিত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক স্বাধীনতা সংগঠন (American Civil Liberties Union – ACLU) গুয়ানতানামো বে-তে বন্দী অভিবাসীদের প্রতি কর্তৃপক্ষের নিষ্ঠুর আচরণের অভিযোগ এনেছে এবং সেখানকার বন্দীশালা থেকে আরও লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমানে বাস্টিদাস মারাকাইবোতে ফিরে এসেছেন এবং একটি সাধারণ জীবন অতিবাহিত করছেন। তিনি এখন একটি হট ডগের দোকানে কাজ করেন।
বাস্টিদাস বলেন, “আমি মনে করি, এটা ঈশ্বরের পরীক্ষা ছিল। তিনি হয়তো আমার জন্য অন্য কিছু ঠিক করে রেখেছেন। তাই, তিনি আমাকে (যুক্তরাষ্ট্রে) থাকতে দেননি।”
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস