ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-এ গ্রেপ্তার ও হস্তান্তরের সম্ভবনা নিয়ে তদন্ত শুরু করতে যাচ্ছে দেশটির সিনেট। সিনেটর ইমি মার্কোসের ঘোষণার পরেই এই তদন্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যিনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের বোন।
আগামী মে মাসে মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে দুতার্তের গ্রেপ্তার এবং আইসিসি-তে তাকে হস্তান্তরের বিষয়টি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
সিনেটর ইমি মার্কোস বলেছেন, “নিয়ম অনুযায়ী সবকিছু হয়েছে কিনা, এবং তার (দুতারে্তর) অধিকারগুলো সুরক্ষিত ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা জরুরি।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমাদের সার্বভৌমত্ব এবং আইনি প্রক্রিয়া সমুন্নত রাখতে হবে।”
তিনি আরও জানান দুতার্তের গ্রেপ্তার “দেশকে গভীর ভাবে বিভক্ত করেছে”। সিনেট আগামী বৃহস্পতিবার শুনানির আয়োজন করেছে এবং পুলিশসহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদেরকে এতে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
দুতার্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কর্তৃক অভিযুক্ত প্রথম কোনো এশীয় সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে মাদকবিরোধী যুদ্ধের নামে হাজার হাজার মানুষকে হত্যার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
২০২২ সালে মার্কোস এবং দুতার্তে পরিবার একটি রাজনৈতিক জোটে আবদ্ধ হয়, যার ফলে মার্কোস জুনিয়র প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং দুতার্তের মেয়ে সারা দুতার্তে ভাইস প্রেসিডেন্ট হন।
তবে, পরবর্তীতে এই দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। দুতার্তে পরিবার প্রেসিডেন্টের অপসারণ চেয়েছিল।
সারার বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং মার্কোস জুনিয়রকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। সম্প্রতি, আসন্ন নির্বাচনের প্রচারণার সময় সাবেক প্রেসিডেন্ট দুতার্তে বোমা হামলার মাধ্যমে সিনেটরদের হত্যার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
১১ মার্চ, ম্যানিলা বিমানবন্দরে মার্কোস জুনিয়রের নির্দেশে দুতার্তেকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পরে তাকে আইসিসি-র কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ফিলিপাইন, যা ২০১৯ সালে হেগ-ভিত্তিক এই আদালতের সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নিয়েছিল, জানিয়েছে যে তারা ইন্টারপোলের অনুরোধে সাড়া দিয়ে এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
দুতার্তের সমর্থকরা তার মুক্তির দাবিতে এবং দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য দেশজুড়ে বিক্ষোভ করেছে।
এই ঘটনার মধ্যে, সিনেটর ইমি মার্কোস তার ভাইয়ের থেকে অনেকটাই আলাদা অবস্থান নিয়েছেন।
যদিও তিনি আসন্ন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের হয়ে পুনরায় নির্বাচন করতে যাচ্ছেন। গ্রেপ্তারের কয়েক ঘণ্টা পরেই তিনি “গরিব প্রেসিডেন্ট দুতার্তের” গ্রেপ্তারের বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং সতর্ক করে বলেন, “এটা কেবল সমস্যাই বাড়াবে।”
দুতার্তের পরিবারের সদস্যরা সম্প্রতি হুমকি দিয়েছিলো যে তারা তার (ইমি মার্কোসের) পুনর্নির্বাচনে সমর্থন দেবে না, এবং বর্তমানে জরিপ বলছে যে আগামী ১২ মের নির্বাচনে তিনি তার সিনেটের আসন হারাতে পারেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা