মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসনের (এফডিএ) প্রধান হিসেবে ড. মার্টি মাকারি-কে মনোনয়ন দিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে সিনেটে শুনানিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তিনি সরাসরি কোনো উত্তর দিতে এড়িয়ে গেছেন। এর মধ্যে রয়েছে গর্ভপাতের ওষুধ, কর্মী ছাঁটাই এবং ভ্যাকসিন বিষয়ক একটি বৈঠক বাতিল করার মতো বিষয়গুলো।
ডা. মাকারি একজন সার্জন, লেখক এবং গবেষক হিসেবে পরিচিত। তিনি জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং আগে ফক্স নিউজের হয়ে কাজ করার সময় এফডিএ-কে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ ও ‘রাজনৈতিক প্রভাব ও লাল ফিতার গ্যাঁড়াকলে আবদ্ধ’ বলেছিলেন। সিনেটের স্বাস্থ্য কমিটির শুনানিতে তিনি এফডিএ-এর ‘সোনার মানের বিজ্ঞান’-এর প্রশংসা করেন।
তবে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান উভয় দলের সিনেটরদের প্রশ্নের জবাবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে রাজি হননি। এর মধ্যে গর্ভপাতের ওষুধ মিফেপ্রিস্টোন (mifepristone) নিয়ে তার অবস্থান জানতে চাওয়া হলে তিনি সরাসরি কোনো উত্তর দেননি। উল্লেখ্য, ২০২১ সাল থেকে এফডিএ-র এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই ওষুধটি অনলাইনে প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে পাওয়া যায়।
লুইজিয়ানার রিপাবলিকান সিনেটর বিল ক্যাসিডি, যিনি স্বাস্থ্য কমিটির চেয়ারম্যান, তাকে দেওয়া জবাবে মাকারি জানান, ‘মিফেপ্রিস্টোন নীতি নিয়ে আমার কোনো পূর্ব ধারণা নেই। আমি কেবল ডেটাগুলো ভালোভাবে দেখতে চাই এবং এফডিএ-র পেশাদার বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলতে চাই, যারা ইতিমধ্যে এই ডেটা পর্যালোচনা করেছেন।’
স্বাস্থ্য বিষয়ক মন্ত্রী রবার্ট এফ. কেনেডিও একই ধরনের মন্তব্য করেছেন। তিনি জানুয়ারিতে আইনপ্রণেতাদের জানিয়েছিলেন, তিনি মিফেপ্রিস্টোন-এর নিরাপত্তা এবং অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, শৈশবের ভ্যাকসিন ও মনোযোগ ঘাটতির ওষুধসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত থেরাপির বিষয়ে ‘পর্যালোচনা’ করতে চান।
এফডিএ-এর অনুমোদিত ওষুধগুলো বাতিল করার সম্ভাবনা নিয়ে চিকিৎসক, গবেষক এবং ওষুধ প্রস্তুতকারকদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। মিফেপ্রিস্টোন প্রায় ২৫ বছর আগে অনুমোদিত হয়েছিল এবং এফডিএ বিজ্ঞানীরা বারবার এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। এর ফলে ওষুধটি ব্যবহারের বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে, যেমন রোগীদের ব্যক্তিগতভাবে এটি সংগ্রহ করার নিয়মটি বাতিল করা হয়েছে।
সেনেটর ম্যাগি হাসান, যিনি ডেমোক্রেট দলের সদস্য, তিনি মাকারির কাছে জানতে চান, তিনি অনলাইনে স্বাস্থ্য পেশাদারদের প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে ওষুধটি সহজলভ্য রাখার বর্তমান কাঠামো বহাল রাখবেন কিনা। জবাবে মাকারি বলেন, ‘আমি ডেটা যাচাই না করে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে রাজি নই।’
এফডিএ কমিশনার সাধারণত ওষুধ বিষয়ক দৈনিক পর্যালোচনাগুলোর সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকেন না। তবে তারা এফডিএ বিজ্ঞানী এবং সরকারের অন্যান্য বিভাগের মধ্যে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে সুরক্ষা দেওয়ার কাজটি করে থাকেন।
এফডিএ-এর ইতিহাসে এই মুহূর্তে অস্থির একটি সময় চলছে। গত মাসে, এফডিএ হঠাৎ করে বিভিন্ন বিভাগ থেকে কয়েকশ কর্মীকে ছাঁটাই করে, যদিও তাদের মধ্যে কয়েকজনকে পরে আবার কাজে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, সংস্থার শীর্ষ খাদ্য নিয়ন্ত্রক এবং আরও কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন বা অবসর গ্রহণ করেছেন। মাকারি আইনপ্রণেতাদের জানান, তিনি কর্মী ছাঁটাইয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না এবং তিনি কর্মীদের পুনর্বহাল করা হবে কিনা সে বিষয়ে নিজস্ব মূল্যায়ন করবেন।
একইভাবে, এফডিএ-এর ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞদের একটি আসন্ন বৈঠক বাতিল করার বিষয়েও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। যদিও বৈঠকটি আগামী মৌসুমের ফ্লু শট বিষয়ক সুপারিশ তৈরি করার কথা ছিল। তিনি বৈঠকের গুরুত্ব কমিয়ে বলেন, আগের বছরগুলোতে এফডিএ-এর প্যানেল আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন কর্তৃপক্ষের সুপারিশগুলোতে ‘রাবার স্ট্যাম্প’ মেরেছিল।
কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পেলে মাকারি সিদ্ধান্ত নেবেন যে, কোন ভ্যাকসিন বিষয়ক বিষয়গুলোতে সংস্থার বাইরের উপদেষ্টাদের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এফডিএ-এর বিজ্ঞানীরা শটের জন্য স্ট্রেইন নির্বাচন করবেন এবং সেগুলো প্রস্তুতকারকদের কাছে পাঠাবেন, যাতে আগামী শরতের জন্য আপ-টু-ডেট ভ্যাকসিন তৈরি থাকে।
সিনেটর ক্যাসিডি বলেন, ‘এর ফলে স্বচ্ছতার অভাব হচ্ছে’। তিনি আরও উল্লেখ করেন, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণে কেনেডির ‘ব্যাপক স্বচ্ছতা’র প্রতিশ্রুতির সঙ্গে এই বৈঠক বাতিল করার বিষয়টি সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমরা চাই আমেরিকান জনগণ বিষয়টি জানুক এবং বৈঠক বাতিল করা হলে সেই সুযোগটি কমে যায়।’
এই বাতিলকরণ ছিল এক সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে দ্বিতীয়বার ভ্যাকসিন বিষয়ক বৈঠক বাতিল করার ঘটনা। এর আগে, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) ভ্যাকসিন উপদেষ্টা প্যানেলের একটি বৈঠকও স্থগিত করা হয়েছে, যা এখনো নতুন করে নির্ধারণ করা হয়নি।
কেনেডি সম্প্রতি ‘মেক আমেরিকা হেলদি এগেইন’ নামে একটি কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন, যা ভ্যাকসিন, ওজন কমানোর ওষুধ এবং উদ্দীপক সহ এফডিএ-অনুমোদিত বেশ কয়েকটি পণ্যের নিরাপত্তা পর্যালোচনা করবে। স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং ডেমোক্রেট আইনপ্রণেতারা সতর্ক করেছেন যে, কেনেডি হয়তো এফডিএ-এর ভ্যাকসিন উপদেষ্টা প্যানেলে তার নিজস্ব বিশ্বাস ধারণ করেন এমন নতুন বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিতে পারেন।
মাকারি আবারও বলেন, তার ‘ওই কমিটি বা অন্য কোনো কমিটি পুনর্গঠনের কোনো পূর্বপরিকল্পনা নেই’, এবং তিনি কেনেডির প্রচেষ্টার পক্ষে সমর্থন জানান। তিনি বলেন, ‘সচিব কেনেডি আমেরিকাকে আবার সুস্থ করতে চান।’
মাকারি খাদ্য বিষয়ক কেনেডির ‘মাহা অ্যাজেন্ডা’-এর প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন, বিশেষ করে খাদ্য বিষয়ক সংযোজন, রং এবং অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান নিয়ে কথা বলেন, যা দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, ‘শিল্প এই রাসায়নিক উপাদানগুলোকে নিরাপদ বলে জানায়—তাদের মধ্যে কিছু উদ্বেগের কারণ। আমরা অবশ্যই সেই উপাদানগুলো দেখব এবং আমি নিশ্চিত করছি, যদি আমাকে অনুমোদন করা হয়, তবে আমি তাই করব।’
কেনেডির তুলনায়, মাকারিকে ট্রাম্পের স্বাস্থ্য বিষয়ক আরও চিরাচরিত মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ধারণা করা হচ্ছে, সিনেটে তার মনোনয়ন নিশ্চিত হবে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তার মনোনয়নের ওপর ভোটাভুটি হতে পারে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস