পোপ ফ্রান্সিসের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ: ফুসফুসে প্রদাহের কারণে হাসপাতালে ভর্তি, সংকট এখনো কাটেনি
রোম, ১৩ মার্চ: ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস ফুসফুসে প্রদাহ (নিউমোনিয়া) নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ৮৮ বছর বয়সী এই ধর্মগুরুকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ব্রঙ্কাইটিস (শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ) নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে এবং ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পরে। ভ্যাটিকান সূত্রে খবর, হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে ধীরে ধীরে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও, এখনো তিনি শঙ্কামুক্ত নন।
পোপ ফ্রান্সিসের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগের কারণ হলো, তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিছু শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। অল্প বয়সে তার ফুসফুসের একটি অংশ অস্ত্রোপচার করে বাদ দিতে হয়েছিল এবং তিনি অতিরিক্ত ওজনের অধিকারী। এছাড়াও, তিনি সাধারণত খুব বেশি সক্রিয় জীবনযাপন করেন না। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পোপের বয়স এবং শারীরিক অবস্থার কারণে তার সুস্থ হতে বেশি সময় লাগছে।
হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে পোপের শারীরিক অবস্থার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র:
- ১৪ ফেব্রুয়ারি: সামান্য জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন পোপ ফ্রান্সিস। চিকিৎসকরা জানান, তার শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ হয়েছে। এরপর বেশ কয়েকটি পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল করা হয় এবং রবিবার একটি বিশেষ প্রার্থনাসভায় অন্য একজন কার্ডিনাল যোগ দেন।
- ১৫ ফেব্রুয়ারি: জ্বর কমে গেলেও শ্বাসকষ্ট ছিল। চিকিৎসকরা সম্পূর্ণ বিশ্রামের পরামর্শ দেন এবং রবিবার দুপুরে সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে দেওয়া তার ভাষণ বাতিল করা হয়।
- ১৬ ফেব্রুয়ারি: শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ছিল এবং তিনি টেলিভিশনে প্রার্থনা শোনেন।
- ১৭ ফেব্রুয়ারি: পরীক্ষায় তার শ্বাসযন্ত্রে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাকের সংক্রমণ ধরা পরে, যা উদ্বেগের কারণ হয়। চিকিৎসার ধরনে পরিবর্তন আনা হয় এবং বুধবারের সাধারণ অডিয়েন্স বাতিল করা হয়।
- ১৮ ফেব্রুয়ারি: বুকের সিটি স্ক্যান-এ ধরা পরে যে তার দুই ফুসফুসেই নিউমোনিয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কর্টিসন ও অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা শুরু হয়। শনিবারের বিশেষ অডিয়েন্সও বাতিল করা হয়।
- ১৯ ফেব্রুয়ারি: শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করে এবং রক্ত পরীক্ষার ফলাফলে প্রদাহের মাত্রা কমতে দেখা যায়। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি হাসপাতালে পোপের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
- ২০ ফেব্রুয়ারি: সামান্য শারীরিক উন্নতি হয়।
- ২১ ফেব্রুয়ারি: চিকিৎসকরা জানান, পোপের অবস্থা এখনো সংকটজনক এবং তিনি বিপদমুক্ত নন। তবে জীবনহানির সম্ভবনা নেই। চিকিৎসকরা আরও জানান, স্টেরয়েড ব্যবহারের কারণে তার ডায়াবেটিস দেখা দিয়েছে এবং সেটিরও চিকিৎসা চলছে।
- ২২ ফেব্রুয়ারি: শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে তাকে অক্সিজেন দিতে হয়। এছাড়া, রক্তস্বল্পতা দেখা দেওয়ায় তার দেহে দুই ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়।
- ২৩ ফেব্রুয়ারি: কিডনির কার্যকারিতা সামান্য হ্রাস পায়।
- ২৪ ফেব্রুয়ারি: শারীরিক অবস্থার সামান্য উন্নতি হয়।
- ২৫ ফেব্রুয়ারি: অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও সংকট কাটেনি। ফুসফুসের সংক্রমণ পর্যবেক্ষণে বুকের সিটি স্ক্যান করা হয়।
- ২৬ ফেব্রুয়ারি: কিডনির সমস্যা কমে আসে। এখনও তিনি অক্সিজেন নিচ্ছেন এবং শ্বাসকষ্ট কমানোর জন্য ফিজিওথেরাপি চলছে।
- ২৭ ফেব্রুয়ারি: ফুসফুসের সংক্রমণের স্বাভাবিক অগ্রগতি হচ্ছে বলে চিকিৎসকরা জানান।
- ২৮ ফেব্রুয়ারি: হঠাৎ কাশি হওয়ায় তিনি বমি করেন এবং শ্বাসকষ্ট বাড়ে। এরপর তার ফুসফুস থেকে তরল অপসারণ করা হয় এবং অক্সিজেন সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন মাস্ক পরানো হয়।
- ১ মার্চ: শ্বাসকষ্টের পর তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হয়। নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন মাস্কের পরিবর্তে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে নাকের মাধ্যমে উচ্চমাত্রায় অক্সিজেন গ্রহণ করেন।
- ২ মার্চ: শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ছিল। নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন হয়নি, শুধুমাত্র নাকের মাধ্যমে উচ্চ চাপযুক্ত অক্সিজেন থেরাপি দেওয়া হয়। তিনি একটি বিশেষ প্রার্থনাসভায় অংশ নেন।
- ৩ মার্চ: শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় ব্রঙ্কোস্কোপি করতে হয়।
- ৪ মার্চ: অবস্থা স্থিতিশীল ছিল। দিনে নাকের মাধ্যমে এবং রাতে নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন মাস্কের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়।
- ৫ মার্চ: শ্বাসকষ্ট হয়নি। ফিজিওথেরাপি শুরু করা হয়।
- ৬ মার্চ: শ্বাসকষ্ট হয়নি। ফিজিওথেরাপি ও শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত চিকিৎসা চলতে থাকে।
- ৭ মার্চ: শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ছিল এবং শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত চিকিৎসা অব্যাহত ছিল।
পোপ ফ্রান্সিস বিশ্বে ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু। তার সুস্থতা কামনা করে বিশ্বজুড়ে প্রার্থনা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস