যুক্তরাষ্ট্রে গত মাসে ১৫১,০০০ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলেও বেকারত্বের হার সামান্য বেড়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত সরকারি এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম দপ্তর শুক্রবার তাদের প্রতিবেদনে জানায়, জানুয়ারিতে দেশটির কর্মসংস্থান পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল এবং নতুন করে ১,২৫,০০০ মানুষের কাজের সুযোগ হয়েছিল। তবে অর্থনীতিবিদরা ধারণা করেছিলেন, ফেব্রুয়ারিতে নতুন করে ১,৬০,০০০ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেকারত্বের হার বেড়ে ৪.১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া, বেকার মানুষের সংখ্যাও প্রায় ২,০৩,০০০ বৃদ্ধি পেয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবা, আর্থিক খাত এবং পরিবহন ও গুদামজাতকরণ খাতে কর্মসংস্থান বাড়লেও সরকারি খাতে ১০,০০০ কর্মী ছাঁটাই হয়েছে, যা জুন ২০২২-এর পর সর্বোচ্চ। রেস্টুরেন্ট ও বারগুলোতেও প্রায় ২৮,০০০ কর্মী কাজ হারিয়েছেন। জানুয়ারিতে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ৩০,০০০।
অর্থনীতিবিদ সারাহ হাউজ মনে করেন, শ্রমবাজার এখনো স্থিতিশীল রয়েছে, তবে এক-দুই বছর আগের তুলনায় পরিস্থিতি ভিন্ন। তিনি আশঙ্কা করছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতিমালার কারণে কর্মসংস্থান কমে যেতে পারে এবং বেকারত্ব আরও বাড়তে পারে। ট্রাম্প সরকারি বিভিন্ন খাতে অর্থ বরাদ্দ কমানো এবং ফেডারেল কর্মীদের ছাঁটাই করার পাশাপাশি বাণিজ্য শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর ফলে বেসরকারি খাতেও এর প্রভাব পড়তে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে কোভিড-১৯ মহামারীর ধাক্কা সামলে অপ্রত্যাশিতভাবে শক্তিশালী পুনরুদ্ধার দেখা গিয়েছিল, যার ফলস্বরূপ ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি (Inflation) সর্বোচ্চ ৯.১ শতাংশে পৌঁছেছিল। এই পরিস্থিতিতে ফেডারেল রিজার্ভ (The Fed) সুদের হার ১১ বার বৃদ্ধি করে, যা গত দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। উচ্চ সুদের হার সত্ত্বেও শক্তিশালী ভোক্তা ব্যয়, ব্যবসায়িক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং অভিবাসীদের আগমন শ্রম ঘাটতি কমাতে সহায়ক হওয়ায় অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় ছিল।
যদিও ২০২১-২০২৩ সালের মধ্যে চাকরির বাজারে ব্যাপক উন্নতি হয়েছিল, তবে বর্তমানে সেই ধারা কিছুটা কমে এসেছে। গত বছর গড়ে প্রতি মাসে ১,৬৮,০০০ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। যদিও ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ২,১৬,০০০, ২০২২ সালে ছিল ৩,৮০,০০০ এবং ২০২১ সালে ছিল রেকর্ড ৬,০৩,০০০।
বর্তমানে মূল্যস্ফীতি কমে যাওয়ায় ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমানো শুরু করে। সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি ২.৪ শতাংশে নেমে আসে। ধারণা করা হচ্ছিল, চলতি বছরেও সুদের হার কমানো অব্যাহত থাকবে, কিন্তু গ্রীষ্মের পর থেকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কিছুটা ভাটা পড়ায় ফেডারেল রিজার্ভ আপাতত সেই সিদ্ধান্ত থেকে বিরত রয়েছে।
ফেব্রুয়ারিতে কর্মীদের গড় ঘণ্টাপ্রতি আয় ০.৩ শতাংশ বেড়েছে, যা জানুয়ারিতে ছিল ০.৪ শতাংশ। ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তারা মনে করেন, এই পরিসংখ্যান সুদের হার কমানোর ক্ষেত্রে তাদের বর্তমান ‘অপেক্ষার’ নীতিকে সমর্থন করে।
তবে, কলম্বাস, ওহাইও-ভিত্তিক একটি পরিবেশগত প্রযুক্তি সংস্থা রিভাইভ এনভায়রনমেন্টাল টেকনোলজি এলএলসি (Revive Environmental Technology LLC)-এর প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা রিক গিলেস্পি জানিয়েছেন, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও তিনি তাদের কোম্পানির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী। বর্তমানে তাদের কোম্পানিতে ৩৪ জন পূর্ণকালীন কর্মী কাজ করছেন এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ওহাইও এবং মিশিগানে আরও ১০ থেকে ২০ জন কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।
অন্যদিকে, কিছু ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা যাচ্ছে। প্যাট্রিস অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস নামক একটি নিয়োগ সংস্থার ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক শীলা মোহন-পিটারসন জানিয়েছেন, বায়োটেক ও হাই-টেক কোম্পানিগুলোর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তিনি প্রচুর জীবনবৃত্তান্ত (resume) পাচ্ছেন। আগে যেখানে মাসে একটি বা দুটি এমন জীবনবৃত্তান্ত পাওয়া যেত, সেখানে এখন সপ্তাহে এক থেকে দুটি পাচ্ছেন। তার মতে, ফেডারেল সরকারের ব্যয় সংকোচনের কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
শীলা মোহন-পিটারসন মনে করেন, বিশেষ করে স্টার্টআপ কোম্পানিগুলো সরকারি অনুদানের উপর নির্ভরশীল। তাই, সরকারি অনুদান কমে গেলে তারা কর্মীদের ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর প্রভাব বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং রেমিট্যান্সের (Remittance) উপর পড়তে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা কমতে পারে, যা রপ্তানি আয়ে প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া, সুদের হার বাড়লে বা কমলে তা প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্সেও প্রভাব ফেলতে পারে।
সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বাজারের এই পরিবর্তনের দিকে আমাদের নজর রাখা দরকার, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস (Associated Press)