যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে অস্থিরতা, উদ্বিগ্ন বিনিয়োগকারীরা
নিউ ইয়র্ক, [তারিখ উল্লেখ করা হলো না] : চলতি সপ্তাহে অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজার। দেশটির অর্থনীতির গতি কমে যাওয়ার আশঙ্কা এবং বাণিজ্য শুল্ক নিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের অনিশ্চয়তা এই পরিস্থিতির মূল কারণ। শুক্রবারও বাজারটিতে দর কষাকষি চলেছে, যা বাজারের অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
শুক্রবার দিনের শুরুতে এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচক কিছুটা বাড়লেও, পরে তা কমে যায়। এক পর্যায়ে সূচকটি ১.৩ শতাংশ পর্যন্ত নিচে নেমে যায়। এই সূচক গত ছয় দিন ধরে প্রতিদিন অন্তত ১ শতাংশের বেশি ওঠা-নামা করছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই মাসটি সেপ্টেম্বরের পর থেকে সবচেয়ে খারাপ সময় হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।
শুক্রবার বেলা ২টা ১৩ মিনিটে ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ ১৮৬ পয়েন্ট বা ০.৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া, নাসডাক কম্পোজিট সূচকও ০.৪ শতাংশ বেড়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারের দিকে এখন সবার নজর। দেশটির শ্রম দপ্তর জানিয়েছে, গত মাসে নিয়োগের সংখ্যা বেড়েছিল ১৫১,০০০। যদিও এটি অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাসের চেয়ে সামান্য কম ছিল, তবে জানুয়ারির নিয়োগের তুলনায় এটি বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজার বেশ কিছুদিন ধরেই দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। গত মাসে এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচক তার সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছানোর পর থেকে প্রায় ৬.২ শতাংশ কমেছে। এর কারণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার আশঙ্কাকে দায়ী করা হচ্ছে। ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে মার্কিন ব্যবসা এবং পরিবারগুলোর মধ্যে আস্থা কমে গেছে, যা অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারের এই উত্থান-পতন মূলত ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতি নিয়ে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে হয়েছে। প্রথমে বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর শুল্ক আরোপ এবং পরে কিছু ক্ষেত্রে এর ছাড় দেওয়া, এমনকী আবার শুল্ক আরোপের কারণে ব্যবসায়ীরা এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।
হোয়াইট হাউজের এমন নীতির কারণে ব্যবসায়ীরা তাদের বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা বোধ করছেন। একইসঙ্গে, শুল্কের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মার্কিন পরিবারগুলোও তাদের ব্যয়ের ক্ষেত্রে সতর্ক হচ্ছে, যা অর্থনীতির গতিকে আরও কমিয়ে দিতে পারে।
শুক্রবার ট্রাম্প বলেছেন, তিনি শুল্কের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান ফিরিয়ে আনতে চান। তবে বাজারকে স্থিতিশীল করার মতো কোনো নিশ্চয়তা তিনি দেননি। তিনি বলেন, ‘কিছু পরিবর্তন এবং সমন্বয় সবসময়ই থাকবে’।
এদিকে বন্ড বাজারেও অস্থিরতা দেখা গেছে। ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের ফলন হ্রাস-বৃদ্ধি হয়েছে। শুক্রবারের শ্রমবাজারের প্রতিবেদন প্রকাশের পর এটি ৪.২২ শতাংশ পর্যন্ত নেমে আসে, যা বৃহস্পতিবারের ৪.২৮ শতাংশ থেকে বেড়ে পরে ৪.৩২ শতাংশ হয়।
ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্তের কারণেও বাজারে প্রভাব পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে ফেডারেল রিজার্ভ এই বছর অন্তত দুই থেকে তিনবার সুদের হার কমাতে পারে।
ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল শুক্রবার আবারও বলেছেন, সুদের হার কমানোর বিষয়ে তারা এখন অপেক্ষা করবেন এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন।
শেয়ার বাজারে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দামে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। ওয়াল স্ট্রিটে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, প্রযুক্তি কোম্পানি হিউলেট প্যাকার্ড এন্টারপ্রাইজের শেয়ারের দাম ১৩.৬ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে, ফার্মেসি চেইন ওয়ালগ্রিনস বুটস অ্যালায়েন্সের শেয়ারের দাম ৭.৪ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া, চিপ কোম্পানি ব্রডকমের শেয়ারের দামও বেড়েছে ৭.৫ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে জার্মানির শেয়ার বাজারও ১.৮ শতাংশ কমেছে। এছাড়া, ইউরোপ ও এশিয়ার অন্যান্য বাজারেও সূচকগুলো নিম্নমুখী ছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারের এই অস্থিরতা বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে। বিশ্ব অর্থনীতির এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়, বিনিয়োগ এবং প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একইসঙ্গে, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যেতে পারে। বিনিয়োগকারীদের এখন বাজারের গতিবিধির ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস