যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামসের বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগ খারিজ করার জন্য আদালতের কাছে সুপারিশ করেছেন একজন আইনজীবী। তবে এই অভিযোগটি পুনরায় চালুর (রি-ফাইল) অনুমতি দিতে রাজি নন তিনি। মেয়র অ্যাডামসের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো যেন রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির কারণ না হয়, সে বিষয়টিও বিবেচনা করতে বলেছেন তিনি।
জানা গেছে, ফেডারেল বিচারক ডেলে ই. হোর কাছে এই সুপারিশ পেশ করেছেন আইনজীবী পল ক্লিমেন্ট। জর্জ ডব্লিউ বুশ সরকারের আমলে সলিসিটর জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। আদালত তাকে নিরপেক্ষ পরামর্শ দেওয়ার জন্য নিয়োগ করেছিলেন।
এর আগে, বিচার বিভাগ (জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট) এরিক অ্যাডামসের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো প্রত্যাহার করার আবেদন জানিয়েছিল। তবে তারা এই বছরের মেয়র নির্বাচনের পর পুনরায় মামলাটি চালু করার অনুমতি চেয়েছিল। ক্লিমেন্ট তার লিখিত আবেদনে বিচারককে জানান, মামলাটি খারিজ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে এবং বিচার বিভাগের পুনরায় মামলা করার আবেদন মঞ্জুর করা উচিত হবে না। এমনটি হলে তা “ড্যামোক্লেসের তরবারির” মতো মেয়রের ওপর ঝুলতে থাকবে।
ক্লিমেন্ট আরও বলেন, “জনপ্রতিনিধিদের বিচারের ক্ষেত্রে পুনরায় অভিযোগের এই সম্ভাবনা বেশ উদ্বেগের কারণ। একবার অভিযোগ গঠন হওয়ার পরে, পুনরায় অভিযোগের সম্ভাবনা তৈরি হলে, জনগণের মনে হতে পারে যে একজন সরকারি কর্মকর্তার কার্যক্রম জনগণের স্বার্থের পরিবর্তে ফেডারেল সরকারের সন্তুষ্টির উপর নির্ভরশীল।
তিনি বলেন, অভিযোগ পুনরায় দায়ের করার অনুমতি না দিলে, সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের কারণে সৃষ্ট “দৃষ্টিভ্রমের” সমস্যা দূর হবে।
আদালতে শুনানিতে বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, মেয়র নির্বাচনের কারণে অ্যাডামসের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটবে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের আইন-শৃঙ্খলার অগ্রাধিকারগুলোতে সহায়তা করতে সমস্যা হবে। এই কারণে নির্বাচনের পর উপযুক্ত মনে হলে অভিযোগ পুনর্বহাল করার কথা বলা হয়েছিল।
মেয়র অ্যাডামসের আইনজীবীরা পরে এই অভিযোগগুলো “with prejudice” সহ খারিজ করার আবেদন করেন, যার অর্থ হল, সেগুলো আর পুনরায় আনা যাবে না। বিচারক এখনো এই আবেদনের ওপর কোনো রায় দেননি।
উল্লেখ্য, এরিক অ্যাডামসকে গত সেপ্টেম্বরে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। অভিযোগ ছিল, তিনি ব্রুকলিনের বরো প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে তুরস্কের এক কর্মকর্তার কাছ থেকে এক লাখ ডলারেরও বেশি অবৈধ অনুদান এবং ভ্রমণের সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেছেন। অ্যাডামস নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।
বিচারক হো জানিয়েছেন, তিনি উভয় পক্ষ এবং ক্লিমেন্টকে অভিযোগ খারিজের আইনি মানদণ্ড, আদালতের নথির বাইরে অন্য কোনো বিষয় বিবেচনা করা যায় কিনা এবং অতিরিক্ত পদক্ষেপ ও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা, সে বিষয়ে অবগত করতে বলেছেন। তিনি আরও জানতে চেয়েছেন, কখন অভিযোগ পুনর্বহালের সুযোগ ছাড়া তা খারিজ করা উপযুক্ত হবে। শুক্রবারের মধ্যে লিখিত যুক্তি জমা দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়ে, এক সপ্তাহ পরে প্রয়োজনে মৌখিক যুক্তিতর্কের কথা বলেছেন তিনি।
অভিযোগ খারিজের বিষয়ে প্রথমে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ড্যানিয়েল স্যাসুনকে নির্দেশ দেওয়া হলেও, তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে জানান, “ভুল বিবেচনার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অভিযোগ খারিজের চেষ্টা করাটা” তিনি সমর্থন করতে পারবেন না। স্যাসুন আরও উল্লেখ করেন, নির্বাচনের আগে অভিযোগ আনা হয়েছিল, যা বিচার বিভাগের নির্বাচন-বছরের সংবেদনশীলতা সম্পর্কিত নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। অভিযোগ পুনর্বহালের হুমকি ছিল মূলত “একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ফৌজদারি প্রক্রিয়া ব্যবহারের” শামিল।
স্যাসুনের পদত্যাগের পর, বিচার বিভাগের আরও কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ মোট ছয়জন প্রসিকিউটর পদত্যাগ করেন।
ক্লিমেন্ট তার সুপারিশে উল্লেখ করেছেন, বিচার বিভাগের মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত “মামলার অভ্যন্তরীণ আলোচনা এবং প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে বেশ কয়েকটি পদত্যাগ ও অস্বাভাবিক প্রকাশ” ঘটিয়েছে। তিনি আরও লেখেন, “এসব নথিপত্র অভিযোগ দায়ের এবং প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে গুরুতর প্রশ্ন তৈরি করেছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস