মহাকাশ অভিযানে নতুন দিগন্ত, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (International Space Station – ISS) আটকে পড়া নভোচারীদের ফিরিয়ে আনতে সফল হলো স্পেসএক্স (SpaceX)।
শুক্রবার রাতে ফ্লোরিডা থেকে ফ্যালকন ৯ রকেটে করে চারজন নভোচারীকে নিয়ে একটি দল যাত্রা শুরু করে।
এই মিশনে যুক্ত হওয়া নভোচারীরা হলেন— মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যান ম্যাকলেইন ও নিকোল আয়ার্স, জাপানের তাকুয়া ওনিশি এবং রাশিয়ার কিরিল পেশকভ।
প্রায় নয় মাস ধরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে আটকে ছিলেন দুই মার্কিন নভোচারী— বুচ উইলমোর এবং সুনি উইলিয়ামস।
বোয়িং স্টারলাইনার ক্যাপসুলে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেওয়ায় তাদের পৃথিবীতে ফেরার বিষয়টি বিলম্বিত হয়।
সাধারণত মহাকাশচারীরা ছয় মাস আইএসএস-এ কাটান, কিন্তু উইলমোর ও উইলিয়ামসের ক্ষেত্রে মিশনটি অপ্রত্যাশিতভাবে দীর্ঘ হয়ে যায়।
নতুন নভোচারীদের দল আইএসএস-এ পৌঁছে সেখানকার কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা লাভ করবেন।
সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী সপ্তাহে তাদের পৃথিবীতে ফিরে আসার কথা রয়েছে।
নাসার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উইলমোর ও উইলিয়ামস-এর দল গত বছর ৫ জুন কেপ ক্যানাভেরাল থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন।
কিন্তু স্টারলাইনারের কিছু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তাদের এই দীর্ঘ সময় ধরে মহাকাশে থাকতে হয়েছে।
এমনকি তাদের প্রত্যাবর্তনেও কয়েক দফা দেরি হয়।
এই ঘটনায় মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এবং বোয়িং-এর মধ্যে গভীর আলোচনা হয়।
এই ঘটনার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও তৈরি হয়।
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক নভোচারীদের দ্রুত ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং এর জন্য পূর্ববর্তী প্রশাসনের ওপর দায় চাপান।
উইলমোর এবং উইলিয়ামস দুজনেই তাদের দীর্ঘ সময় ধরে মহাকাশে থাকার ব্যাপারে নাসার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন।
তারা জানান, অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন।
তারা আইএসএস-এর বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সহায়তা করেছেন, যেমন— ভাঙা টয়লেট মেরামত করা, গাছপালা জল দেওয়া এবং বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো।
উইলিয়ামস নয়টি স্পেসওয়াক করে নারী মহাকাশচারীদের মধ্যে নতুন রেকর্ড গড়েছেন।
এই দীর্ঘ সময় পরিবার থেকে দূরে থাকার কারণে তাদের পরিবারের সদস্যরা সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছেন।
উইলমোরের স্ত্রী ও দুই মেয়ে এবং উইলিয়ামসের স্বামী ও মা-এর জন্য এটি ছিল অত্যন্ত কঠিন সময়।
উইলমোর জানান, তিনি এখন সরাসরি মানুষের সঙ্গে মিশতে চান এবং উইলিয়ামস তার দুটি ল্যাব্রাডর কুকুরকে নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান।
নভোচারীদের এই মিশন মহাকাশ গবেষণায় নতুন আগ্রহ তৈরি করেছে।
তাদের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে মহাকাশ অভিযানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান