বিখ্যাত অভিনেতা জিন হ্যাকম্যান এবং তাঁর স্ত্রী বেটসি আরাকাওয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোর সান্তা ফে শহরে তাঁদের নিজ বাসভবনে মারা গেছেন।
কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হ্যাকম্যান হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান এবং তাঁর মৃত্যুর এক সপ্তাহ আগেই তাঁর স্ত্রী হ্যান্টাভাইরাস সংক্রমণে মারা যান।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ নিচে দেওয়া হলো।
ফেব্রুয়ারি মাসের ১১ তারিখে, বেটসি আরাকাওয়ার শেষ কার্যক্রম নজরে আসে।
ওই দিন তিনি সকালে একজন ম্যাসাজ থেরাপিস্টের সঙ্গে ইমেইল আদান-প্রদান করেন।
এরপর দুপুরে সান্তা ফে-র একটি মুদি দোকানে যান এবং পরে একটি ফার্মেসি ও একটি পোষ্য খাদ্য সামগ্রীর দোকানে যান।
এরপর বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে তিনি তাঁর ও হ্যাকম্যানের বাসস্থানে ফিরে আসেন।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ১১ই ফেব্রুয়ারির পর আরাকাওয়ার আর কোনো গতিবিধি শনাক্ত করা যায়নি।
ধারণা করা হচ্ছে, ওই দিনই তাঁর মৃত্যু হয়।
ময়নাতদন্তে জানা যায়, মৃত্যুর আগে তিনি সম্ভবত হ্যান্টাভাইরাসের উপসর্গ অনুভব করছিলেন।
ফেব্রুয়ারি মাসের ১৭ ও ১৮ তারিখে হ্যাকম্যানের হৃদযন্ত্রের কার্যকলাপ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়।
১৭ তারিখে তাঁর হৃদযন্ত্রে স্বাভাবিক কার্যক্রম দেখা গেলেও, ১৮ তারিখে অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন নামক অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন ধরা পরে।
এরপর তাঁর হৃদযন্ত্রের আর কোনো কার্যকলাপের রেকর্ড পাওয়া যায়নি।
প্রধান মেডিকেল পরীক্ষক ড. হিদার জারেল-এর মতে, এই তথ্যের ভিত্তিতে ধারণা করা যায়, হ্যাকম্যান সম্ভবত ১৮ই ফেব্রুয়ারির দিকে মারা যান।
২৬শে ফেব্রুয়ারি, বাড়ির নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আসা এক কর্মী বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে নিরাপত্তা কর্মীকে খবর দেন।
নিরাপত্তা কর্মী বাড়ির ভেতরে দু’জনকে মাটিতে পরে থাকতে দেখেন।
এরপর তিনি ৯১১ নম্বরে ফোন করে তাঁদের শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে কিনা, তা জানেন না বলে জানান।
পরে, ওই কর্মী এবং অন্য একজন কর্তৃপক্ষকে জানান যে, তাঁরা সাধারণত বাড়ির মালিকদের খুব একটা দেখতেন না এবং তাঁদের সঙ্গে সবশেষ দেখা হয়েছিল প্রায় দুই সপ্তাহ আগে।
পুলিশ হ্যাকম্যানকে একটি প্রবেশ পথে এবং আরাকাওয়াকে বাথরুমে মৃত অবস্থায় খুঁজে পায়।
এছাড়াও, একটি পোষা কুকুরকে একটি আলমারির ভেতরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
আরাকাওয়া ৯ই ফেব্রুয়ারি গ্রুডা ভেটেরিনারি হাসপাতাল থেকে ‘জিন্না’ নামের একটি কেলপি প্রজাতির কুকুরকে নিয়ে এসেছিলেন।
কর্তৃপক্ষের ধারণা, কুকুরটির মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে এই হাসপাতালের বিষয়টি সাহায্য করতে পারে।
কুকুরটির মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ের জন্য একটি ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে।
২৭শে ফেব্রুয়ারি, হ্যাকম্যান এবং আরাকাওয়ার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
গোয়েন্দারা একটি অনুসন্ধান পরোয়ানায় উল্লেখ করেছেন যে, রক্ষণাবেক্ষণ কর্মী তাঁদের মরদেহ আবিষ্কার করার বেশ কিছু সময় আগেই তাঁদের মৃত্যু হয়েছিল।
২৮শে ফেব্রুয়ারি, প্রাথমিক ময়নাতদন্তের ফলাফলে মৃত্যুর কারণ জানা না গেলেও, কার্বন মনোক্সাইড বিষক্রিয়ার কারণে তাঁদের মৃত্যু হয়নি বলে নিশ্চিত করা হয়।
এছাড়াও, তাঁদের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
৭ই মার্চ, কর্তৃপক্ষ হ্যাকম্যান ও আরাকাওয়ার মৃত্যুর কারণ প্রকাশ করে।
ডাক্তার জারেল জানান, তাঁদের দুজনেরই স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।
হ্যাকম্যানের মৃত্যু হয় হৃদরোগে, এবং তাঁর আলঝেইমার রোগও এতে ভূমিকা রেখেছে।
বেটসি আরাকাওয়ার মৃত্যুর কারণ হিসেবে হ্যান্টাভাইরাস পালমোনারি সিনড্রোমকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এটি মূলত সংক্রমিত ইঁদুরের বিষ্ঠা থেকে ছড়ানো একটি বিরল রোগ।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস