গাজাবাসীকে বিতাড়িত করার ট্রাম্পের আহ্বানে মুসলিম বিশ্বের তীব্র প্রত্যাখ্যান
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা থেকে সেখানকার অধিবাসীদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে মুসলিম দেশগুলো। সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) এক বিশেষ বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠকে গাজা উপত্যকার পুনর্গঠন ও সেখানকার শাসন ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। মিশর প্রস্তাবিত একটি পরিকল্পনাকে সমর্থন জানিয়েছে ওআইসি। এই পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের অধীনে একটি প্রশাসনিক কমিটি গাজার শাসনকার্য পরিচালনা করবে।
অন্যদিকে, হামাস জানিয়েছে যে তারা মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে অস্ত্রবিরতির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা শুরু করতে রাজি হয়েছে। হামাসের মুখপাত্র আব্দুল লতিফ আল-কানৌয়া জানান, আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে। তবে, বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান চলছে। এর মধ্যে, উভয়পক্ষের মধ্যে কয়েক সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি চলছে, যা এখনো অনিশ্চিত। দ্বিতীয় ধাপে অবরুদ্ধ গাজা থেকে অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি, দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সৈন্য প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেন, ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করার যেকোনো পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ। তাঁরা ইসরায়েলের ‘নাগরিকদের অনাহারে রাখার’ নীতিরও নিন্দা জানান। তাঁদের মতে, গাজায় খাদ্য, জ্বালানি ও ঔষধ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, হামাসের হামলার জবাবে ইসরায়েল গাজায় অভিযান শুরু করে, যাতে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৮,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। হামাসের হামলায় নিহত হয়েছিলেন প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি নাগরিক।
অস্ত্রবিরতির প্রথম ধাপে ইসরায়েল প্রায় ২,০০০ ফিলিস্তিনি বন্দীর বিনিময়ে ২৫ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেয়। বর্তমানে হামাসের হাতে জীবিত জিম্মির সংখ্যা ২৪ জন এবং নিহত জিম্মির দেহাবশেষ রয়েছে ৩৪ জনের কাছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েল দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু করতে গড়িমসি করছে। তারা হামাসের কাছে অবশিষ্ট জিম্মিদের অর্ধেক মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে অস্ত্রবিরতির প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
বৈঠকে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক যৌথ বিবৃতিতে গাজার পুনর্গঠন পরিকল্পনার প্রশংসা করেছেন। তাঁরা বলেছেন, হামাসকে গাজা শাসন করতে দেওয়া হবে না এবং ইসরায়েলের প্রতিও তারা কোনো হুমকি সৃষ্টি করতে পারবে না।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস