ইরান ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে এবং আলোচনা পুনরায় শুরুর আহ্বান জানিয়েছে চীন ও রাশিয়া। দেশ দুটি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে চলমান অচলাবস্থা নিরসনে এই পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে।
শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতে চীনের পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী মা ঝাওশুর বরাত দিয়ে বলা হয়, রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে মিলে তারা সব ‘অবৈধ একতরফা নিষেধাজ্ঞা’ প্রত্যাহারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াবকভ সের্গেই অ্যালেক্সিভিচ এবং ইরানের প্রতিনিধি কাজেম গারিবাবাদিও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। মা ঝাওশু বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতির মূল কারণগুলো দূর করতে এবং নিষেধাজ্ঞা, চাপ ও শক্তি প্রদর্শনের হুমকি ত্যাগ করতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর কাজ করা উচিত।”
ইরানের প্রতিনিধি গারিবাবাদি এই বৈঠককে ‘খুবই গঠনমূলক ও ইতিবাচক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। একইসঙ্গে তিনি তেহরানকে দুর্বল করতে ‘কিছু দেশের’ বিরুদ্ধে ‘অপ্রয়োজনীয় সংকট’ তৈরির অভিযোগ করেন।
পরবর্তীতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গে তিন দেশের ঊর্ধ্বতন কূটনীতিকদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এই বৈঠকগুলো মূলত ইরানের সঙ্গে অচলাবস্থা নিরসনের সর্বশেষ প্রচেষ্টা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনীর সঙ্গে আলোচনার জন্য পদক্ষেপ নিতে চাইছেন।
যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের পাশাপাশি নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে রাশিয়া ও চীনের সমর্থন ইরানের সঙ্গে আলোচনায় ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির সফল বাস্তবায়নে নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন ছিল অপরিহার্য। কিন্তু ২০১৮ সালে ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিলে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।
চুক্তি অনুযায়ী, ইরানকে ৩.৬৭ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার এবং ৩০০ কিলোগ্রাম ইউরেনিয়ামের মজুত রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA)-এর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, ইরানের বর্তমান মজুত ৮,২৯৪.৪ কেজি, যার কিছু অংশ তারা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করছে। ইরান বরাবরই বলে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নারী অধিকার, অর্থনীতি এবং ইরানের ধর্মীয় শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখা গেছে। গত শুক্রবার ট্রাম্প খামেনীকে চিঠি লিখে আলোচনার আহ্বান জানান এবং সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপের বিষয়ে সতর্ক করেন।
জবাবে খামেনী ট্রাম্পকে ‘উদ্ধত সরকার’-এর সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী নন বলে উপহাস করেন। তিনি অভিযোগ করেন, তেহরান ‘বহু বছর ধরে আলোচনা করেছে, একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বাক্ষরিত চুক্তিতে পৌঁছেছিল’, কিন্তু ট্রাম্প সেটি ‘ভেঙে দিয়েছেন’। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত তাদের ‘হুমকি’ দেওয়া হচ্ছে। তবে এর আগে জাতিসংঘের এক ভাষণে তেহরান ‘আলোচনায় প্রস্তুত’ বলে জানিয়েছিল।
ইরানের অন্যান্য কর্মকর্তারাও আলোচনার সম্ভাবনা নিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন। বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ বৈঠক নতুন আলোচনার ইঙ্গিত হতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা