রবার টায়ার থেকে ফ্যাশনেবল জুতা: রুয়ান্ডার এক উদ্যোক্তার সাফল্যের গল্প
বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর প্রায় এক বিলিয়ন টায়ার ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যায়। এদের অধিকাংশই ফেলা হয় ডাম্পিং গ্রাউন্ডে, যা পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করে। আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডাতে, এমন এক উদ্যোক্তা পুরনো টায়ার পুনর্ব্যবহার করে ফ্যাশনেবল জুতা তৈরি করেছেন।
কেভিন কাগিরিম্পুন্ডু, রুয়ান্ডা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিজাইন নিয়ে পড়াশোনা করার সময় কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত ছিল দেখে হতাশ হয়েছিলেন। তিনি নিজের উদ্যোগে কিছু করার কথা ভাবলেন। পুরনো টায়ার থেকে কীভাবে কিছু তৈরি করা যায়, সেই বিষয়ে গবেষণা করতে গিয়ে তিনি জুতার তলার ধারণা পান।
২০১৩ সালে, তিনি তাঁর বন্ধু ইসোল্ডে শিমওয়ের সাথে মিলে ‘উজুরি কে অ্যান্ড ওয়াই’ (Uzuri K&Y) নামের একটি সংস্থা শুরু করেন। ‘উজুরি’ শব্দটি সোয়াহিলি ভাষার, যার অর্থ ‘সৌন্দর্য ও ভালোত্ব’। এই পরিবেশ-বান্ধব জুতা প্রস্তুতকারক সংস্থাটি পুরুষ, মহিলা এবং শিশুদের জন্য হাতে তৈরি স্যান্ডেল সরবরাহ করে। কাগিরিম্পুন্ডু বলেন, “আমরা অন্যদের থেকে আলাদা কিছু করতে চেয়েছিলাম এবং রুয়ান্ডাতে প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে চেয়েছি। আমরা চেয়েছিলাম এই প্রক্রিয়ার একটি অংশ হতে, দেশের জন্য কিছু করতে। আমরা ভেবেছিলাম, এর মাধ্যমে নিজেদের জন্য এবং আমাদের মতো তরুণদের জন্য আয়ের একটি উৎস তৈরি করা যেতে পারে।”
২০০৮ সালে রুয়ান্ডা সরকার পলিথিন ব্যাগ তৈরি, আমদানি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। ২০১৯ সালে তারা এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে স্ট্র, বোতল এবং অন্যান্য একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহারও নিষিদ্ধ করে। কাগিরিম্পুন্ডু বলেন, তাঁর কোম্পানির লক্ষ্য রুয়ান্ডার বর্জ্য হ্রাস করার প্রচেষ্টার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
উজুরি কে অ্যান্ড ওয়াই স্থানীয় ডাম্পিং গ্রাউন্ড থেকে টায়ার কিনে কিগালির কারখানায় স্যান্ডেল তৈরি করে। পূর্ণ ক্ষমতায় কারখানাটি প্রতি মাসে ৪,৫০০ জোড়ার বেশি স্যান্ডেল তৈরি করতে পারে, যা রুয়ান্ডা এবং কেনিয়ার নাইরোবি সহ বিভিন্ন স্থানে অনলাইন ও দোকানে বিক্রি করা হয়।
রুয়ান্ডা পরিবেশ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের এক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২২ সালে দেশটি ৫,০০০ টনের বেশি টায়ার বাতিল করেছে। কাগিরিম্পুন্ডু জানান, তাঁদের সংস্থাটি এখন পর্যন্ত রুয়ান্ডার ডাম্পিং গ্রাউন্ড থেকে ১০ মেট্রিক টন রাবার অপসারণ করেছে।
তবে কাগিরিম্পুন্ডু মনে করেন, পরিবেশগত দিকটির মতোই গুরুত্বপূর্ণ হলো মানুষের জীবনে এর প্রভাব। তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি ব্যবসা তৈরি করতে চেয়েছিলাম যা নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে।”
নারীদের ক্ষমতায়ন
সংস্থাটি কীভাবে শুরু হয়েছিল, সেই কথা বলতে গিয়ে কাগিরিম্পুন্ডু জানান, দক্ষ শ্রমিকের অভাব ছিল তাঁদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি। তিনি বলেন, “জুতা তৈরির কাজ কেউ জানত না।” তাই তিনি স্থানীয়দের কারিগর ও উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
প্রায় ১,৫০০ জন তরুণ-তরুণী এই প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী। কাগিরিম্পুন্ডু যোগ করেন, নারীদের জন্য একটি স্থিতিশীল আয়ের ব্যবস্থা করা “অমূল্য”। রুয়ান্ডাতে বর্তমানে বেকারত্বের হার ১৩ শতাংশ, যেখানে নারীদের মধ্যে এই হার ১৪.৫ শতাংশ।
তিনি বলেন, “এটি নারীদের একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা, যা একটি বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু তৈরি করছে।”
বর্তমানে, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানেও টায়ারের স্তূপ দেখা যায়, যা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। এমন পরিস্থিতিতে, কাগিরিম্পুন্ডুর এই উদ্যোগ বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হতে পারে। আমাদের দেশেও পুরোনো টায়ার পুনর্ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরি করা সম্ভব। একইসাথে, এটি নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে পারে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন