পানামা খাল: বন্দরের মালিকানা পরিবর্তনের প্রস্তাবে চীনের তীব্র প্রতিক্রিয়া
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম পানামা খালের বন্দরগুলো একটি মার্কিন বিনিয়োগ কোম্পানির কাছে বিক্রি করার প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করেছে। হংকংভিত্তিক কোম্পানি সি কে হাাচিসন (CK Hutchison) এই বন্দরগুলোর মালিক। চীনের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবকে ‘জাতীয় স্বার্থের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা’ এবং ‘হীনমন্যতা’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার চীনের সরকারি সংবাদপত্র, ‘তা কুং পাও’-এ প্রকাশিত একটি নিবন্ধে এই চুক্তির সমালোচনা করা হয়। নিবন্ধটি চীনের হংকং ও ম্যাকাও বিষয়ক অফিসের ওয়েবসাইটে পুনঃপ্রকাশ করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় শুক্রবার সি কে হাাচিসন কোম্পানির শেয়ারের দাম ৬ শতাংশের বেশি কমে যায়। বিশ্লেষকদের মতে, বেইজিংয়ের আপত্তির কারণে চুক্তিটি ভেস্তে যেতে পারে, এমন উদ্বেগের কারণেই বিনিয়োগকারীরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ব্ল্যাকরক নামক একটি বিনিয়োগকারী দলের নেতৃত্বে গত সপ্তাহে প্রায় ২২.৮ বিলিয়ন ডলারে পানামা খালের বালবোয়া ও ক্রিস্টোবাল বন্দর কেনার ঘোষণা দেওয়া হয়। এই দলের সি কে হাাচিসনের অধীনে থাকা আরও ৪৩টি বন্দরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার কথা ছিল, যেগুলোর ১৯টি দেশের ১৯২টি জেটিতে তাদের কার্যক্রম রয়েছে। তবে চীনের তীব্র আপত্তির কারণে এখন এই চুক্তি ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
সি কে হাাচিসন-এর মালিকানাধীন বন্দরগুলো বিক্রি করার এই প্রস্তাবকে হংকংয়ের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী লি কা-শিংয়ের মালিকানাধীন একটি বৈশ্বিক কোম্পানির জন্য রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ব্ল্যাকরকের কাছ থেকে ভালো দাম পাওয়ার জন্যই তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, বন্দরগুলো বিক্রি করে সি কে হাাচিসন ১৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি নগদ অর্থ পাওয়ার আশা করছে।
পানামা খালের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জলপথ। বিশ্বের প্রায় ৪ শতাংশ সমুদ্র বাণিজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের ৪০ শতাংশের বেশি কন্টেইনার এই খালের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়। উল্লেখ্য, ১৯১৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই খালটি নির্মাণ করে এবং পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে পানামার কাছে এর নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করে।
চীনের এই কঠোর প্রতিক্রিয়ার কারণ হলো, তারা মনে করে এই চুক্তির মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাছাড়াও, চীনের পক্ষ থেকে সি কে হাাচিসন-এর বিরুদ্ধে ‘মুনাফা-সর্বস্ব’ হওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি-ঘনিষ্ঠ একটি সংবাদপত্রের এমন মন্তব্যের পর এই চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন