গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনের এই ভূখণ্ডে হামাসকে চাপে রাখতেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতি নিয়ে যখন আলোচনা চলছে, ঠিক সেই সময়ে ইসরায়েলের এই সিদ্ধান্তে সেখানকার প্রায় ২৩ লাখ মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়বে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে গাজার একমাত্র জল শোধনাগারটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এর ফলে সুপেয় পানির সংকট আরও তীব্র হবে। এছাড়া, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ারও আশঙ্কা রয়েছে। গাজার বাসিন্দাদের জন্য ডিজেল-চালিত জেনারেটরই এখন বিদ্যুতের প্রধান উৎস।
ইসরায়েলের জ্বালানি মন্ত্রী এলি কোহেন এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, “সমস্ত ইসরায়েলি জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নেব। যুদ্ধের পর হামাসকে গাজায় থাকতে দেওয়া হবে না।”
বর্তমানে ইসরায়েল চাচ্ছে যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাড়াতে, যা গত জানুয়ারিতে শুরু হয়েছিল এবং গত সপ্তাহান্তে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে। ইসরায়েল এর আগে গাজায় সব ধরনের পণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল। তাদের অভিযোগ, হামাস ত্রাণ চুরি করছে এবং তা থেকে লাভবান হচ্ছে।
গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানও জোরদার হয়েছে। ইসরায়েলি বিমান, ড্রোন ও গোলন্দাজ বাহিনীর হামলায় সেখানে হতাহতের খবর পাওয়া যাচ্ছে। রবিবার (আজ) উত্তর গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী একটি বিমান হামলা চালিয়েছে, যেখানে সেনাদের কাছে বিস্ফোরক ডিভাইস পুঁতে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছিল বলে দাবি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, হামাস চাইছে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা দ্রুত শুরু করতে। এই ধাপে যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তি এবং ইসরায়েলি অবরোধ তুলে নেওয়ার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। হামাস জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারগুলোতে বন্দী ফিলিস্তিনিদের মুক্তি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছে।
মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে হামাসের প্রতিনিধি দলের আলোচনা হয়েছে। তারা গাজায় মানবিক সহায়তা সরবরাহ ‘কোনো শর্ত ছাড়াই’ দ্রুত চালুর ওপর জোর দিয়েছে। হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম জানিয়েছেন, “আমরা মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারী এবং মার্কিন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন ইসরায়েলকে চুক্তির শর্ত মেনে চলতে এবং দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু করতে বাধ্য করে।”
এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, তারা সোমবার দোহায় প্রতিনিধি দল পাঠাবে, যেখানে যুদ্ধবিরতি আলোচনা চলবে।
জিম্মিদের মধ্যে পাঁচ জন মার্কিন নাগরিককে মুক্ত করার জন্য হামাসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি আলোচনা চলছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। জানা গেছে, তাঁদের মধ্যে একজন এখনো জীবিত আছেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম গত সপ্তাহে এই আলোচনার খবর প্রকাশ করে। এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এক দূত জানান, হামাসের সঙ্গে তাঁর আলোচনা ‘খুবই ফলপ্রসূ’ হয়েছে এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যে জিম্মি মুক্তির বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের অক্টোবরে হামাসের হামলার পর গাজায় ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে চলা লড়াইয়ে সেখানকার প্রায় পুরো জনসংখ্যা বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে নিহত হয়েছে প্রায় ৪৮ হাজারের বেশি মানুষ, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।
যুদ্ধবিরতির প্রথম ছয় সপ্তাহে ইসরায়েলের হাতে বন্দী থাকা ২৫ জন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়। এর বিনিময়ে ইসরায়েল প্রায় ১ হাজার ৮০০ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয়। এছাড়া, গাজায় খাদ্য, আশ্রয় ও চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ করা হয়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান