মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে, যার মূল কারণ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করা মন্তব্য। রবিবার এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে “পরিবর্তনের একটি সময়” আসবে এবং তিনি মন্দার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিতে রাজি নন। এর পরেই সোমবার সকালে শেয়ার বাজারের সূচকগুলো পড়তে শুরু করে।
ডাউ জোন্স ফিউচার ৪৭৮ পয়েন্ট বা ১.২% কমে যায়। এস অ্যান্ড পি ৫০০ ফিউচার ১.৩৭% এবং নাসডাক ফিউচার ১.৬% হ্রাস পায়। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বিনিয়োগকারী এবং অর্থনীতিবিদদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির যেকোনো উত্থান-পতন বিশ্ব অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে, এবং এর প্রভাব বাংলাদেশেও অনুভূত হতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি নিয়ে চলমান অনিশ্চয়তা বাজারের জন্য উদ্বেগের কারণ। তিনি কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন, যদিও পরে তা ২ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক ১০% থেকে বাড়িয়ে ২০% করা হয়েছে। ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫% শুল্ক আগামী ১২ মার্চ থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া, কানাডার দুগ্ধজাত পণ্যের ওপর ২৫০% এবং কাঠের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন তিনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের চেয়ে শুল্কের আলোচনা, সিদ্ধান্ত পরিবর্তন এবং বাজারের অনিশ্চয়তা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলছে। এই অস্থিরতা বাজারের স্থিতিশীলতাকে ব্যাহত করতে পারে।
বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রে কর্মী ছাঁটাই বাড়ছে, নতুন নিয়োগ কমে গেছে, ভোক্তাদের আস্থা কমছে এবং মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। সাধারণত, টানা দুই প্রান্তিকে জিডিপি-র (মোট দেশজ উৎপাদন) ঋণাত্মক বৃদ্ধিকে মন্দা হিসেবে ধরা হয়। ন্যাশনাল ব্যুরো অফ ইকোনমিক রিসার্চের বিজনেস সাইকেল ডেটিং কমিটি নামক সরকারি সংস্থা মন্দার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছে, “অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উল্লেখযোগ্য হ্রাস, যা পুরো অর্থনীতিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং কয়েক মাসের বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয়, তাকে মন্দা বলে।”
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির এই অস্থিরতা বাংলাদেশের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে। এর কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার। দেশটির অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলে, বাংলাদেশের রপ্তানি আয় কমে যেতে পারে, বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া, রেমিট্যান্স প্রবাহও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারক এবং ব্যবসায়ীদের জন্য এই পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন