সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত হলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক, যার মূল লক্ষ্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি টানা।
যদিও সরাসরি প্রেসিডেন্ট পর্যায়ের কোনো প্রতিনিধি এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না, তবুও দুই দেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা আলোচনার টেবিলে বসেছিলেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি’র চিফ অফ স্টাফ আন্দ্রি ইয়ারমাক এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেশটির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ এই বৈঠকে প্রতিনিধিত্ব করেন।
বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়ার আগে ইয়ারমাক সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত।”
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কিয়েভ এই সংঘাত বন্ধ করতে কঠিন পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত কিনা, সেটাই তাদের প্রধান বিবেচ্য বিষয়।
উল্লেখ্য, জেলেনস্কিও এই মুহূর্তে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন এবং যুবরাজের সঙ্গে তার বৈঠকের কথা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা এবং গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান পুনরায় চালু হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় এই বৈঠকের গুরুত্ব অনেক।
তবে, ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির ব্যক্তিগত সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় এই সহায়তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
হোয়াইট হাউসে দুই নেতার মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়, যা সরাসরি গণমাধ্যমের সামনে আসে।
এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের একাংশ নির্বাচনের মাধ্যমে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের পদ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
হোয়াইট হাউসের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করার জন্য ইউক্রেন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে তাদের উপর কোনো শান্তি চুক্তি চাপিয়ে দেওয়া না হয়।
ইয়ারমাক এক সাক্ষাৎকারে “শক্তিশালী আমেরিকান নেতৃত্ব”-এর প্রশংসা করে বলেন, “এমন একটি শান্তি খুঁজে বের করতে হবে যা ন্যায়সঙ্গত এবং টেকসই হয়।”
বৈঠকের প্রাক্কালে, ইউক্রেন রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর ওপর ড্রোন হামলা চালায়, যা যুদ্ধের শুরু থেকে চালানো সবচেয়ে বড় হামলা ছিল।
ইউক্রেনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই হামলার মাধ্যমে তারা রাশিয়ার প্রতি একটি বার্তা দিতে চেয়েছিল, যাতে তারাও যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আগ্রহী হয়।
অন্যদিকে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আলোচনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চায়।
এদিকে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পাওয়া সংকেতগুলি তাদের জন্য আনন্দের কারণ হয়েছে।
তবে, মস্কো এখনই কোনো “গোলাপী চশমা” পরতে রাজি নয়।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এক সম্মেলনে বলেন, “সর্বদা ভালো কিছুর আশা রাখতে হবে, তবে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
আমাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে।”
যুদ্ধ পরিস্থিতি বিবেচনায়, রাশিয়া সম্প্রতি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে নতুন করে আক্রমণ শুরু করেছে।
তারা তাদের সীমান্তের কাছে অবস্থিত কুর্স্ক অঞ্চলের ১০০ বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে বলে জানা গেছে।
ইউক্রেন জানিয়েছে, কুর্স্ক অভিযান ছিল ভবিষ্যৎ আলোচনার টেবিলে দর কষাকষির ক্ষমতা বাড়ানোর একটি কৌশল।
পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক এক সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া বার্তায় এই বৈঠকের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেন, “প্রিয় আমেরিকান ও ইউক্রেনীয় বন্ধুগণ, এই সুযোগ হাতছাড়া করবেন না।
সারা বিশ্ব আজ জেদ্দায় আপনাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
শুভকামনা!”
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান