আফ্রিকার গভীর অরণ্যে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৃষ্টিবন কঙ্গো বেসিন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান। কিন্তু এই বিশাল বনের অনেক রহস্য এখনো মানুষের অজানা।
সম্প্রতি, কঙ্গো অববাহিকার পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র নিয়ে গবেষণা জোরদার হয়েছে। সেখানকার বিজ্ঞানীরা এই অঞ্চলের কার্বন নিঃসরণ এবং শোষণের হার নির্ণয় করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
কঙ্গো অববাহিকা অঞ্চলে কার্বন নির্গমন এবং শোষণের পরিমাণ জানতে “এডি কোভেরিয়েন্স ফ্লাক্স টাওয়ার” (Eddy Covariance Flux Tower) নামে বিশেষ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
এই টাওয়ারগুলি অনেকটা বিশাল আকারের “স্টেথোস্কোপ”-এর মতো কাজ করে, যা বনভূমি এবং বায়ুমণ্ডলের মধ্যেকার কার্বন ডাই অক্সাইডের আদান-প্রদান পর্যবেক্ষণ করে।
বিজ্ঞানীরা নিয়মিতভাবে এই টাওয়ারের তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন, যা পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের চিত্র বুঝতে সাহায্য করে।
এই গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু হলো কঙ্গোর ইয়াঙ্গাম্বি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ।
একসময় বেলজিয়ান ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে থাকা এই অঞ্চলের ইতিহাস আজও অনেক ঘটনার সাক্ষী।
এখানকার গবেষণা কেন্দ্রটি একসময় শোষণের প্রতীক ছিল, যেখানে স্থানীয় শ্রমিকদের কঠোর পরিশ্রম করতে হতো, কিন্তু তাদের কাজের স্বীকৃতি সেভাবে দেওয়া হতো না।
বর্তমানে, কঙ্গোর বিজ্ঞানীরা এই কেন্দ্রের দায়িত্ব নিয়েছেন এবং এটিকে একটি আধুনিক গবেষণা কেন্দ্রে পরিণত করেছেন।
তাঁরা জলবায়ু পরিবর্তন, বনের কার্বন শোষণ ক্ষমতা, এবং সেখানকার জীববৈচিত্র্য নিয়ে নতুন করে কাজ শুরু করেছেন।
গবেষকরা দেখেছেন, কঙ্গো বেসিনের বনগুলি কার্বন সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এখানকার গাছপালা কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে।
তবে, উদ্বেগের বিষয় হলো, এই বনের কার্বন শোষণের ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর কারণ হতে পারে জলবায়ু পরিবর্তন এবং বনভূমি ধ্বংস।
তাঁরা এখানকার বিভিন্ন গাছের প্রজাতি, যেমন – ‘এন্টাানড্রফ্র্যাগমা ইউটিলে’ (Entandrophragma utile) এবং ‘পেরিকপসিস এলাটা’ (Pericopsis elata) -এর কার্বন শোষণের ক্ষমতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
কঙ্গো বেসিনের গবেষণা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
এখানকার বিজ্ঞানীরা চান এই অঞ্চলে আরও বেশি আবহাওয়া কেন্দ্র স্থাপন করা হোক, যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা যায়।
এই অঞ্চলের বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষকদের ক্ষতির বিষয়টিও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
কঙ্গো অববাহিকার বনভূমি পৃথিবীর ফুসফুসস্বরূপ।
তাই, এর সুরক্ষা অত্যন্ত জরুরি।
এখানকার বিজ্ঞানীদের গবেষণা জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ সুরক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তাঁদের কাজ শুধু কঙ্গোর জন্য নয়, বরং সারা বিশ্বের জন্য একটি মূল্যবান প্রচেষ্টা।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক