মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর কারণ হিসেবে সাবেক ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু নীতি এবং উচ্চ শিক্ষার ক্রমবর্ধমান খরচকে দায়ী করা হচ্ছে। বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল এবং তাদের ওপর নজরদারির কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য আর্থিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীরা একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজস্বের উৎস। এই শিক্ষার্থীরা সাধারণত স্থানীয় শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেশি টিউশন ফি দিয়ে থাকে। কিন্তু ভিসা জটিলতা এবং অন্যান্য কারণে যদি তারা অন্য কোনো দেশে পাড়ি জমায়, তবে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে মার্কিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর।
সম্প্রতি, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেডারেল গ্রান্ট স্থগিত করা হয়েছে, কারণ তারা নিয়োগ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সরকারের কিছু নিয়ম মানতে রাজি হয়নি। শুধু তাই নয়, দেশটির হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ হার্ভার্ডকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের তালিকা জমা দিতে বলেছে।
আগত শিক্ষাবর্ষের জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আবেদন কিছুটা কমেছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে চীনের শিক্ষার্থীরাও রয়েছে। চীন সরকার তাদের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। গত বছর, যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত চীনা শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ৪ শতাংশ কমে গিয়েছিল।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করার ঘটনাও বেড়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে ১ হাজারের বেশি বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে সামান্য অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ভিসা বাতিল হওয়ার কারণে অনেক শিক্ষার্থীকে তাদের পড়াশোনা মাঝপথে ছেড়ে দিতে হয়েছে, যদিও তারা এরই মধ্যে বিপুল পরিমাণ অর্থ টিউশন ফি হিসেবে জমা দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আগমন কমে গেলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ক্ষতি হবে, বিশেষ করে যাদের অনুদান তুলনামূলকভাবে কম। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের মতে, তাদের প্রধান দায়িত্ব হলো স্থানীয় শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবারের প্রতি, যারা নিয়মিত কর প্রদান করে। তবে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তারা বেশি রাজস্ব পেয়ে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা তাদের পরিবারের কাছ থেকে অথবা নিজেদের উপার্জিত অর্থ দিয়ে পড়াশোনার খরচ বহন করে থাকে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, পাবলিক রিসার্চ ইউনিভার্সিটিগুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ার ফলে টিউশন ফি বাবদ আয় বেড়েছে, যা তাদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় ছিল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে, কানাডার মতো দেশগুলোতেও এখন শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ছে। কানাডার কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এরই মধ্যে আমেরিকান শিক্ষার্থীদের আবেদন বেড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষার গন্তব্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের আকর্ষণ কমতে পারে। কারণ, বিশ্বজুড়ে শিক্ষার আরও অনেক সুযোগ তৈরি হয়েছে।
তথ্য সূত্র: CNN