হিলসবোরো ট্র্যাজেডি: পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ওঠা একাধিক অভিযোগ সত্য, পরিবারগুলিকে জানানো হলো
১৯৮৯ সালের ১৫ই এপ্রিল, ইংল্যান্ডের শেফিল্ডের হিলসবোরো স্টেডিয়ামে লিভারপুল ও নটিংহ্যাম ফরেস্টের মধ্যকার এফএ কাপের সেমিফাইনাল চলাকালে ভয়াবহ এক দুর্ঘটনায় ৯৭ জন নিহত হয়েছিলেন। এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ওঠা একাধিক অভিযোগ অবশেষে সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। স্বাধীন পুলিশ আচরণ বিষয়ক দপ্তর (আইওপিসি) সম্প্রতি নিহতদের পরিবারের সদস্যদেরকে এই তথ্য জানিয়েছে।
দুর্ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো দীর্ঘদিন ধরে পুলিশের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে গাফিলতি এবং ঘটনার সত্য গোপনের অভিযোগ করে আসছিল। আইওপিসি জানিয়েছে, ঘটনার তদন্তে তৎকালীন সময়ে দায়িত্ব পালন করা কিছু পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো তারা আমলে নিয়েছে। তবে অভিযুক্ত সকল পুলিশ কর্মকর্তা বর্তমানে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
আইওপিসি’র ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল ক্যাথি ক্যাশেল পরিবারগুলোকে জানিয়েছেন, প্রায় একশ’ জন ভুক্তভোগী মোট ৩৫৪টি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়েছে। তিনি আরও জানান, কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা হয়রানির শিকার হওয়া সমর্থকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন এবং অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছেন। যদিও ঘটনার পরে অনেক ভুক্তভোগী, যাদের মধ্যে অনেকে ঘটনার সময় ১৮ বছরের কম বয়সী ছিলেন, ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস পুলিশের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের ধরনে আপত্তি জানিয়েছিলেন।
২০১৬ সালে নতুন করে হওয়া শুনানিতে আদালত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ম্যাচ সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা চিফ সুপারিনটেনডেন্ট ডেভিড ডাকেনফিল্ডের গুরুতর অবহেলার কারণে নিহতদের ‘বেআইনিভাবে হত্যা’ করা হয়েছে। একইসঙ্গে, দুর্ঘটনার জন্য লিভারপুল সমর্থকদের কোনো ধরনের আচরণ দায়ী ছিল না বলেও আদালত রায় দেন।
পরিবারগুলি দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছিল, দুর্ঘটনার জন্য দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি ঘটনার আসল কারণ ধামাচাপা দেওয়ারও চেষ্টা করা হয়েছে। যদিও ২০১৯ সালে ডেভিড ডাকেনফিল্ডকে গুরুতর অবহেলার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হলেও, তিনি পরে বেকসুর খালাস পান।
আইওপিসি’র তদন্তে নতুন শুনানির রায়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। ক্যাশেল জানান, ঘটনার পর সাউথ ইয়র্কশায়ার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, ঘটনার সময় তাদের সততার অভাব ছিল।
ভুক্তভোগী পরিবার এবং তাদের আইনজীবীরা দীর্ঘদিন ধরে ‘হিলসবোরো আইন’ প্রণয়নের দাবি জানিয়ে আসছেন। এই আইনের মাধ্যমে পুলিশ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের স্বচ্ছতা ও সততা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে, অর্থাৎ দুর্ঘটনার ৩৬তম বার্ষিকীতে সরকার এই আইনটি কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ক্যাশেল আরও বলেন, “হিলসবোরো ইনডিপেন্ডেন্ট প্যানেলের রিপোর্টের মতোই, আমাদের তদন্তেও এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, দুর্ঘটনার পরে সাউথ ইয়র্কশায়ার পুলিশ তাদের দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছে। তবে সমর্থকদের কোনো ধরনের আচরণের কারণে এই ঘটনা ঘটেছে এমন কোনো প্রমাণ আমরা পাইনি। ঘটনার সময় পুলিশের জন্য সততার কোনো নির্দিষ্ট বাধ্যবাধকতা ছিল না। তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারিনি।”
আইওপিসি আগামী ২৮শে মার্চের মধ্যে ভুক্তভোগী পরিবার এবং এই ঘটনার জীবিত সাক্ষীদের পৃথক অভিযোগগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানাবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান