যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের কারণে বড় শহরগুলোতে বাড়ছে জনসংখ্যা
যুক্তরাষ্ট্রের জনশুমারি ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, অভিবাসনের কারণে গত বছর দেশটির প্রধান শহরগুলোতে জনসংখ্যা বেড়েছে। হিউস্টন, মায়ামি এবং ফিনিক্স মেট্রোপলিটন এলাকার মূল শহরগুলোতে এই বৃদ্ধি বিশেষভাবে লক্ষ্য করা গেছে। এর প্রধান কারণ ছিল আন্তর্জাতিক অভিবাসন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি আন্তর্জাতিক অভিবাসন না হতো, তাহলে টেক্সাসের হ্যারিস কাউন্টি, ফ্লোরিডার মায়ামি-ডেড কাউন্টি এবং অ্যারিজোনার মারিকোপা কাউন্টিতে গত বছর কোনো লোকসংখ্যা বাড়তো না। কারণ, ওই সময়ে দেশটিতে বসবাস করা অনেক মানুষ শহর ছেড়ে অন্য স্থানে চলে গিয়েছেন। এমনকি মায়ামি-ডেড কাউন্টিতে অভিবাসীদের কারণে জনসংখ্যা বেড়েছে, কারণ সেখানে জন্মহার মৃত্যুর হারের চেয়ে বেশি হওয়া সত্ত্বেও অনেকে শহর ছেড়ে যাওয়ায় লোকসংখ্যা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
২০২৪ সালে অভিবাসনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা দ্রুত গতিতে বেড়েছে, যা গত ২৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বর্তমানে দেশটির জনসংখ্যা ৩৪ কোটির বেশি। জনশুমারি ব্যুরো জানিয়েছে, মানবিক কারণে যুক্তরাষ্ট্রে আসা অভিবাসীদের গণনার পদ্ধতি পরিবর্তনের ফলে এই চিত্র দেখা যাচ্ছে।
নিউ হ্যাম্পশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র জনসংখ্যাবিদ কেনেথ জনসন এক সাক্ষাৎকারে জানান, “দীর্ঘদিন ধরে জন্মহার বেশি থাকার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু গত চার বছরে এই পার্থক্য কমে যাওয়ায় অভিবাসনই এখন জনসংখ্যার প্রধান চালিকাশক্তি।”
অভ্যন্তরীণ বনাম আন্তর্জাতিক অভিবাসন
পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমান মার্কিন নাগরিকদের তুলনায় অভিবাসীরা শহরগুলোতে থাকতে বেশি পছন্দ করেন। গত বছর অভিবাসীরা মেট্রো এলাকার কেন্দ্রগুলোতে বসতি স্থাপন করেছেন, যেখানে দেশটির পুরনো বাসিন্দারা শহরতলীতে যেতে বেশি আগ্রহী ছিলেন।
আন্তর্জাতিক অভিবাসীদের পছন্দের তালিকায় ছিল মায়ামি-ডেড ও হ্যারিস কাউন্টি। এর পরেই ছিল লস অ্যাঞ্জেলেস এবং শিকাগো শহরের কুক কাউন্টি। অন্যদিকে, অভ্যন্তরীণ অভিবাসীদের পছন্দের জায়গাগুলোর মধ্যে ছিল টেক্সাসের মন্টগোমারি কাউন্টি, অ্যারিজোনার পিনাল কাউন্টি এবং ফ্লোরিডার প্যাসকো কাউন্টি। এছাড়া, ফ্লোরিডার পোল্ক কাউন্টি এবং টেক্সাসের কলিন কাউন্টিতেও অনেকে বসতি স্থাপন করেছেন।
নিউইয়র্কের ঘুরে দাঁড়ানো
২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারীর সময় নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে বহু মানুষ অন্যত্র চলে যান। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর এই অঞ্চলে আবার জনসংখ্যা বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় মেট্রো এলাকা নিউইয়র্ক, যেখানে প্রায় ১ কোটি ৯৯ লক্ষ মানুষের বাস। গত বছর এই অঞ্চলে অন্য যেকোনো শহরের চেয়ে বেশি মানুষ যুক্ত হয়েছে। প্রায় ১ লাখ ৪৭ হাজার বাসিন্দা শহর ছেড়ে গেলেও প্রায় ২ লাখ ৮৮ হাজার অভিবাসী এখানে এসেছেন। এদের মধ্যে টেক্সাস রাজ্য থেকে আসা কয়েক হাজার মানুষও ছিলেন। সান ফ্রান্সিসকো এবং ওয়াশিংটন ডিসি-র মতো শহরগুলোতেও আন্তর্জাতিক অভিবাসনের কারণে জনসংখ্যা বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে জন্মহার কমে যাওয়ায় অভিবাসন গুরুত্বপূর্ণ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কাউন্টিতে (প্রশাসনিক অঞ্চল) গত বছর জনসংখ্যা বেড়েছে। তবে একই সময়ে দুই-তৃতীয়াংশ কাউন্টিতে জন্মহারের চেয়ে মৃত্যুহার বেশি ছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারীর শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে অভিবাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কেনেথ জনসন জানান, মহামারীর আগের পাঁচ বছরে যেখানে বছরে গড়ে প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ মানুষের জনসংখ্যা বাড়তো, সেখানে গত বছর এই সংখ্যা অর্ধেকেরও কম ছিল।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস