রাজনৈতিক বিভাজন: ডিনার টেবিলে দুই ব্রিটিশ নাগরিকের আলাপ
যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক বিভাজন এখন একটি পরিচিত চিত্র। ব্রেক্সিট থেকে শুরু করে বিভিন্ন নীতিগত প্রশ্নে দেশের মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে গভীর ফাটল। সম্প্রতি, ‘ডাইনিং অ্যাক্রস দ্য ডিভাইড’ নামের একটি উদ্যোগে দুই ভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শের মানুষের মধ্যে আলোচনার সুযোগ তৈরি করা হয়েছিল। এই আয়োজনের অংশ হিসেবে ডেভনের নিউটন অ্যাবটের ৬৭ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী, বব এবং ডেভন এক্সিটারের ৬৪ বছর বয়সী, সম্প্রতি অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী জেসি (JC) একটি রেস্টুরেন্টে রাতের খাবারে মিলিত হন। তাদের আলোচনার মূল বিষয় ছিল রাজনৈতিক মতপার্থক্য, সামাজিক সমস্যা এবং তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা।
বব একসময় ছিলেন কট্টর রক্ষণশীল দলের সমর্থক, কিন্তু বর্তমানে তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি সরাসরি সমর্থন করেন না। অন্যদিকে, জেসি ছিলেন আজীবন লেবার পার্টির ভোটার, এমনকি সাম্প্রতিক নির্বাচনে তিনি গ্রিন পার্টিকে ভোট দিয়েছেন। তাদের আলোচনার শুরুতে উঠে আসে বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা। বব জানান, তিনি বর্তমানে কানাডাতেও সময় কাটান।
আলোচনার এক পর্যায়ে তারা তাদের প্রধান উদ্বেগের বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেন। বব মনে করেন, শক্তিশালী নেতৃত্ব প্রয়োজন, যা ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত থাকবে। তিনি প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং নাইজেল ফারাজের উদাহরণ টেনে আনেন। তবে, জেসি দ্রুত এর বিরোধিতা করে বলেন, এই দুই নেতাই কার্যত অযোগ্য। পরবর্তীতে বব অবশ্য উইনস্টন চার্চিল এবং অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের মতো নেতাদের উদাহরণ দেন, যাদের মধ্যে তিনি নেতৃত্বের গুণ দেখতে পান।
আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল সামাজিক আবাসন নিয়ে তাদের ভিন্ন মত। বব মনে করেন, প্রত্যেকের নিজস্ব বাড়ি থাকার ধারণা থেকে সামাজিক আবাসন ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে, জেসি বলেন, খালি বাড়ি এবং বাড়ি মালিকদের সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ না করার বিষয়ে তার আপত্তি রয়েছে। তিনি তরুণ প্রজন্মের বাসস্থান খুঁজে পাওয়ার সমস্যাগুলো তুলে ধরেন।
কোভিড-১৯ মহামারীর সময় তাদের অভিজ্ঞতাও আলোচনায় আসে। বব এবং জেসি দুজনেই জানান, মহামারীর সময় তারা একই উদ্দেশ্যে কাজ করেছেন। বব উল্লেখ করেন প্রকৌশলী এবং বিজ্ঞানীরা কিভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করে গেছেন। জেসি জানান, তিনি ভ্যাকসিন ট্রায়ালে কাজ করেছেন। এই সময়কালে তারা একে অপরের প্রতি সহানুভূতি অনুভব করেন।
খাবারের শেষে, বব এবং জেসি দুজনেই তাদের কথোপকথন উপভোগ করেছেন বলে জানান। বব বলেন, আলোচনাটি ছিল আনন্দদায়ক এবং তারা একে অপরের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করেন। জেসি জানান, তিনি আলোচনাটি কৌতূহলোদ্দীপক হিসেবে উপভোগ করেছেন।
এই আলোচনার মাধ্যমে বোঝা যায়, রাজনৈতিক মতপার্থক্য সত্ত্বেও, মানুষের মধ্যে কিছু বিষয়ে মিল খুঁজে পাওয়া সম্ভব। আলোচনা সমালোচনার ঊর্ধ্বে থেকে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান