জাতিসংঘের একটি তদন্ত প্রতিবেদনে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় ফিলিস্তিনি নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যখাতে ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। সেই সঙ্গে যৌন সহিংসতাকে যুদ্ধের কৌশল হিসেবে ব্যবহারের গুরুতর অভিযোগও উঠেছে।
জাতিসংঘের স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন বৃহস্পতিবার তাদের প্রতিবেদনে জানায়, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে গাজার প্রধান ফার্টিলিটি সেন্টার ধ্বংস করেছে। একইসঙ্গে গাজায় গর্ভবতী নারী, প্রসব ও শিশুদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র সরবরাহ করতে বাধা দিয়েছে।
কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ “গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রজনন ক্ষমতা ধ্বংস করেছে, যা গণহত্যার শামিল”। গত ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর গাজায় ইসরায়েলি অভিযান শুরু হয়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের কমিশন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনল।
জাতিসংঘের এই অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় জেনেভায় অবস্থিত ইসরায়েল মিশন এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা “ভিত্তিহীন অভিযোগকে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান” করছে। ইসরায়েল এই কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। তাদের অভিযোগ, কমিশন ২০২১ সালের মে মাসে গঠিত হওয়ার পর থেকেই “একটি পূর্বনির্ধারিত ও পক্ষপাতদুষ্ট রাজনৈতিক এজেন্ডা” নিয়ে কাজ করছে, যার মূল লক্ষ্য হল ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীকে (আইডিএফ) অভিযুক্ত করা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গাজার আল-বাসমা আইভিএফ সেন্টারসহ সেখানকার মাতৃসদন ও ওয়ার্ডগুলো পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। আল-বাসমা সেন্টারটি ছিল ইন-ভিট্রো ফার্টিলিটির প্রধান ক্লিনিক। ডিসেম্বর ২০২৩ এ সেন্টারটিতে বোমা হামলা চালানো হয়। এতে প্রায় ৪ হাজার ভ্রূণ ধ্বংস হয়ে যায়। সাধারণত, এই ক্লিনিকে প্রতি মাসে ২ থেকে ৩ হাজার রোগী চিকিৎসা নিতেন।
তদন্ত কমিশন জানিয়েছে, তাদের কাছে এমন কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই যে ভবনটি সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছিল। তাদের মতে, এই ধ্বংসযজ্ঞ “গাজার ফিলিস্তিনিদের মধ্যে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে, যা গণহত্যার শামিল”।
গণহত্যার অভিযোগের প্রমাণ অনুসন্ধানে মঙ্গলবার ও বুধবার জেনেভায় শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে যৌন সহিংসতার শিকার ব্যক্তি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য শোনা হয়। কমিশন সিদ্ধান্তে এসেছে যে, ইসরায়েল সরাসরি বেসামরিক নারী ও শিশুদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে, যা “গণহত্যার শামিল এবং ইচ্ছাকৃত হত্যার যুদ্ধাপরাধ”।
কমিশন আরও উল্লেখ করেছে, ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর সদস্যরা প্রকাশ্যে বিবস্ত্র করা, ধর্ষণের হুমকি, যৌন হয়রানি এবং যৌন নিপীড়নের মতো ঘটনাগুলো তাদের “নিয়মিত কার্যক্রমের” অংশ।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা