তেলের দাম কমছে, তবে এর কারণ ট্রাম্পের ‘ড্রিল বেবি ড্রিল’ নীতি নয়। বরং আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের উৎপাদন ও চাহিদার পরিবর্তনের কারণে এই পরিবর্তন হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তেলের দাম কমার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নীতি তেমন কোনো প্রভাব ফেলেনি। বরং শুল্কের কারণে উৎপাদন খরচ বাড়লে, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের তেল উৎপাদন আরও কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
বর্তমানে, আন্তর্জাতিক বাজারে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (WTI), যা যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেলের দামের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক, প্রতি ব্যারেল ৬৭ ডলারের কাছাকাছি রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে এই দাম ১১ শতাংশ কমেছে। যদিও পেট্রোলের দাম সেভাবে কমেনি, তবে এটিও উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি গ্যালন পেট্রোলের গড় দাম ৩.০৮ ডলার, যা এক বছর আগের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ কম।
ট্রাম্প অবশ্য এই দাম কমার কৃতিত্ব নিতে চেয়েছেন। হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা পিটার নাভারো সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “তেলের দাম কমার পেছনে ট্রাম্পের নীতি ‘ড্রিল বেবি ড্রিল’-এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।” তিনি এমনকি তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৫০ ডলারে নেমে আসারও পূর্বাভাস দেন।
তবে, বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের তেল উৎপাদন ক্ষমতা এরই মধ্যে রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে। ট্রাম্পের নীতির কারণে এই উৎপাদন খুব বেশি বাড়েনি। এমনকি সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সাল পর্যন্ত দৈনিক তেল উৎপাদন সামান্য বাড়বে, যা মূলত বর্তমান উৎপাদন হার ধরে রাখারই ইঙ্গিত দেয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তেলের দাম কমার মূল কারণ হলো সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্যহীনতা। ওপেক প্লাস (OPEC+) দেশগুলো উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে, চীনে তেলের চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে, যদি তেলের দাম আরও কমে যায়, তাহলে তা উৎপাদনকারীদের জন্য লোকসানের কারণ হতে পারে। কারণ, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেক মার্কিন তেল কোম্পানি লাভ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, ট্রাম্পের শুল্ক নীতিও উৎপাদনকারীদের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। কারণ, এর ফলে তেল উত্তোলনে ব্যবহৃত স্টিলের দাম বাড়ছে। এমনকি অভ্যন্তরীণ বাজারেও ইস্পাতের দাম বেড়েছে, যা উৎপাদন খরচকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির অবস্থা নিয়েও অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে আমেরিকানদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। অনেকেই মনে করেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে তিনি যথেষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেয়, তাহলে তেলের দাম আরও দ্রুত কমতে পারে। অতীতে, কোভিড-১৯ মহামারী এবং ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার সময় তেলের দামে বড় ধরনের পতন হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী।