পুরুষ নীল-রেখাযুক্ত অক্টোপাস সঙ্গমের সময় স্ত্রী অক্টোপাসকে বাঁচানোর জন্য এক অভিনব কৌশল অবলম্বন করে।
বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এক গবেষণায় আবিষ্কার করেছেন যে, সঙ্গমের আগে পুরুষ অক্টোপাস তার সঙ্গিনীকে এক প্রকার বিষাক্ত নিউরোটক্সিন প্রয়োগ করে, যা সাময়িকভাবে স্ত্রী অক্টোপাসটিকে দুর্বল করে দেয়।
এর ফলে স্ত্রী অক্টোপাসটি পুরুষটিকে ভক্ষণ করতে পারে না।
অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী নিউরোবায়োলজিস্ট, ওয়েন-সং চুং এই গবেষণার প্রধান ছিলেন।
তিনি জানান, সাধারণত স্ত্রী অক্টোপাসের আকার পুরুষ অক্টোপাসের দ্বিগুণ হয়ে থাকে এবং তারা প্রায়ই সঙ্গমের পর তাদের পুরুষ সঙ্গীকে খেয়ে ফেলে।
এই কারণে পুরুষ অক্টোপাস আত্মরক্ষার এক বিশেষ উপায় খুঁজে বের করেছে।
নীল-রেখাযুক্ত অক্টোপাস প্রায় ৪.৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে এবং এদের শরীরে থাকা শক্তিশালী বিষের কারণে এরা সমুদ্রের অন্যতম বিপজ্জনক প্রাণী হিসেবে পরিচিত।
গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষ অক্টোপাস টেট্রোডোটক্সিন (TTX) নামক এক প্রকার বিষাক্ত উপাদান ব্যবহার করে স্ত্রী অক্টোপাসকে দুর্বল করে দেয়।
এই বিষ প্রয়োগের ফলে স্ত্রী অক্টোপাসটি প্রায় এক ঘণ্টা পর্যন্ত নড়াচড়া করতে পারে না এবং শ্বাস-প্রশ্বাসও বন্ধ হয়ে যায়।
চুং জানান, এই প্রথম কোনো প্রাণীর মধ্যে আত্মরক্ষার জন্য নয়, বরং সঙ্গমের উদ্দেশ্যে নিউরোটক্সিন ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেল।
তিনি আরও বলেন, “বিষয়টি সত্যিই খুব চমকপ্রদ।”
সাধারণত অন্যান্য অক্টোপাস প্রজাতিতে সঙ্গমের সময় পুরুষেরা স্ত্রী থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে সক্ষম হয়, তবে নীল-রেখাযুক্ত অক্টোপাসের ক্ষেত্রে কাছাকাছি আসতেই হয়।
চুং, যিনি পূর্বে বিভিন্ন প্রজাতির অক্টোপাস নিয়ে কাজ করেছেন, নীল-রেখাযুক্ত অক্টোপাসের সঙ্গম প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের জন্য ভিডিও ধারণ করেন।
তিনি জানান, পুরুষ অক্টোপাসেরা স্ত্রী অক্টোপাসের পেছনে এসে তাদের নির্দিষ্ট স্থানে কামড় দেয়, যার মাধ্যমে বিষাক্ত TTX প্রবেশ করে।
গবেষণায় আরও জানা যায়, স্ত্রী অক্টোপাস বিষের প্রভাবে দুর্বল হয়ে পড়লেও, এক ঘণ্টা পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
বিষের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকায় তাদের মৃত্যু হয় না।
চুং বলেন, “স্ত্রী যখন জেগে ওঠে, তখনো সে বেশ দুর্বল থাকে।”
চুং এই প্রক্রিয়াটিকে ‘লিঙ্গগুলোর মধ্যে এক ধরনের অস্ত্র প্রতিযোগিতা’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
তিনি আরও বলেন, এই ধরনের আচরণ প্রমাণ করে যে, নীল-রেখাযুক্ত অক্টোপাস কীভাবে তাদের বংশধর টিকিয়ে রাখার জন্য নিজেদের মধ্যে কৌশল তৈরি করেছে।
গবেষণায় পুরুষ অক্টোপাসের মস্তিষ্কের ছবি তোলার জন্য শক্তিশালী এমআরআই স্ক্যানার ব্যবহার করা হয়।
তাতে দেখা যায়, পুরুষ অক্টোপাসের বিষগ্রন্থি, তাদের ছোট আকারের শরীর সত্ত্বেও স্ত্রী অক্টোপাসের চেয়ে বড়।
ভবিষ্যতে, চুং পুরুষ ও স্ত্রী অক্টোপাসের মস্তিষ্কের এই ভিন্নতা নিয়ে আরও গবেষণা করার পরিকল্পনা করছেন।
এই গবেষণা ‘কারেন্ট বায়োলজি’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন