সিঙ্গাপুরের আনাচে-কানাচে লুকিয়ে থাকা এক অসাধারণ খাদ্যভাণ্ডার: কাটোং-জু চিয়াট
সিঙ্গাপুরের ঝলমলে আলো আর আধুনিকতার ভিড়ে, এমন একটি জায়গা আছে যা খাদ্যরসিকদের জন্য যেন এক স্বর্গরাজ্য। জায়গাটির নাম কাটোং-জু চিয়াট (Katong-Joo Chiat), যা স্থানীয়দের কাছে কে-জেসি (K-JC) নামেও পরিচিত। এই এলাকাটি হয়তো অনেক পর্যটকের কাছে ততটা পরিচিত নয়, কিন্তু যারা একবার এখানে এসেছেন, তারা এর খাদ্য-বৈচিত্র্যের প্রেমে পড়েছেন।
সিঙ্গাপুরের স্থানীয় খাদ্য বিষয়ক সাংবাদিক, ডেজিরে কোহ (Desiree Koh) এই এলাকার একজন বাসিন্দা। তিনি জানান, “যারা একবার কে-জেসিতে আসে, তারা এখান থেকে সহজে যেতে চায় না।
কোহ-এর মতে, এখানে সিঙ্গাপুরের সেরা কিছু খাবার পাওয়া যায়, যা আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
আসুন, ডেজিরে কোহ-এর পছন্দের কিছু খাবারের ঠিকানা জেনে নিই:
- চিন মি চিন কনফেকশনারি (Chin Mee Chin Confectionery): একশো বছর আগে হাইনান সম্প্রদায়ের অভিবাসীরা এই কফি শপটি তৈরি করেন। এখানকার চারকোল-টোস্ট করা ‘কায়া টোস্ট’ (Kaya Toast) এখনো অনেকের কাছে প্রিয়। কায়া হলো নারকেলের দুধ ও ডিম দিয়ে তৈরি এক প্রকার মিষ্টি স্বাদের প্রলেপ, যা টোস্টের সাথে পরিবেশন করা হয়।
- হাইগ রোড পুটু পিরিং (Haig Road Putu Piring): এই স্টলটি প্রায় ৪০ বছর ধরে একই স্বাদ ধরে রেখেছে। এখানে পাওয়া যায় পুটু পিরিং, যা গরম ও সুগন্ধি চালের পিঠা। এর উপরে দেওয়া হয় ক্যারামেলাইজড পাম সুগার।
- এইচজেএইচ মাইমুনাহ (Hjh Maimunah): মালয়েশিয়ান খাবারের জন্য এই জায়গাটি বেশ জনপ্রিয়। এখানকার টারমারিক কারি, পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচ দিয়ে সাজানো মাছ এবং অন্যান্য মুখরোচক খাবারগুলো সত্যিই অসাধারণ।
- কুয়ো গুয়ান হুয়াট জু চিয়াট পপিয়াহ (Kway Guan Huat Joo Chiat Popiah): ১৯৩৮ সালে ফুজিয়ান সম্প্রদায়ের মানুষ এই দোকানটি তৈরি করেন। এখানে হাতে তৈরি পপিয়াহ পাওয়া যায়, যা সবজি, সি-ফুড ও বিভিন্ন মশলার মিশ্রণে তৈরি করা হয়। অনেকটা আমাদের দেশের পুরীর মতো, যা রোল করে পরিবেশন করা হয়।
- সুন সুন হুয়াট (Soon Soon Huat): এখানকার কারি পাফগুলো খুবই সুস্বাদু। এই পাফগুলোর আসল অনুপ্রেরণা হলো ব্রিটিশ উপনিবেশের সময়কার কর্নিশ পাস্টি। চিকেন কারি বা মশলাদার সার্ডিনের পুর দেওয়া এই পাফগুলো সিঙ্গাপুরের একটি জনপ্রিয় খাবার।
- পেরানাকান ম্যানশন (Peranakan Mansion): এই এলাকার সংস্কৃতি ও খাবারের স্বাদ নিতে পেরানাকান ম্যানশন ঘুরে আসা যেতে পারে। ১৯২৮ সালের একটি দোকানে (শপহাউস) সজ্জিত এই ম্যানশনটি পেরানাকান সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি তুলে ধরে। এখানে তাদের ঐতিহ্যবাহী আসবাবপত্র, পোশাক এবং প্রাচীন জিনিসপত্র দেখা যায়।
কাটোং-জু চিয়াট-এর এই খাবারের দোকানগুলো সিঙ্গাপুরের খাদ্য সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যারা ভিন্ন স্বাদের খাবার ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই জায়গাটি একটি দারুণ গন্তব্য হতে পারে।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল + লেজার