যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে অস্থিরতা, বাণিজ্য যুদ্ধের উদ্বেগে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শঙ্কা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি এবং শুল্ক আরোপের হুমকির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে, ইতিবাচক অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশের পরও এই অস্থিরতা বজায় ছিল। যদিও মূল্যস্ফীতি কমেছে এবং বেকারত্বের হারও কম, তবুও বাণিজ্য নিয়ে অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগে ফেলেছে।
শেয়ার বাজারের চিত্র
বৃহস্পতিবার সকালের ট্রেডিংয়ে এস এন্ড পি ৫০০ সূচক ০.৩ শতাংশ কমে যায়। এই সূচকটি এক সময় রেকর্ড গড়েছিল, কিন্তু কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ১০ শতাংশ পর্যন্ত নেমে যায়। ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ (Dow Jones Industrial Average) ৫৪ পয়েন্ট বা ০.১ শতাংশ কমে যায় এবং নাসডাক কম্পোজিট ০.৫ শতাংশ নিচে ছিল।
দিনের শুরুতেই ডাউয়ের সূচক ২৩০ পয়েন্ট পর্যন্ত কমে গিয়েছিল, আবার সামান্য বেড়েও ছিল। বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বাজারে এই অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুল্ক আরোপের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে নতুন রূপ দিতে চাইছেন। তিনি চান উৎপাদন শিল্প আবার আমেরিকায় ফিরে আসুক, সরকারি কর্মীর সংখ্যা কমানো হোক এবং অন্যান্য মৌলিক পরিবর্তন আসুক।
শুল্ক নিয়ে নতুন হুমকি
বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যদি মার্কিন হুইস্কির উপর তাদের ‘নোংরা’ শুল্ক প্রত্যাহার না করে, তবে তিনি ইউরোপীয় ওয়াইন ও শ্যাম্পেনের উপর ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন। এর আগে, যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক আরোপ করলে, তার জবাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই পদক্ষেপ নেয়।
আর্থিক বাজারের উপর প্রভাব
এই শুল্ক আরোপের কারণে মার্কিন ব্যবসা এবং ভোক্তাদের মধ্যে আস্থা কমে গেছে। এর ফলে তারা খরচ কমাতে পারে এবং অর্থনীতির গতি কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের আচরণে এরই মধ্যে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে একদিকে যেমন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমতে পারে, তেমনি মূল্যস্ফীতিও বেড়ে যেতে পারে।
ইতিবাচক অর্থনৈতিক তথ্য
বৃহস্পতিবার দুটি ইতিবাচক খবর পাওয়া গেছে। প্রথমত, গত মাসে পাইকারি পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি কমেছে, যা অর্থনীতিবিদদের ধারণার চেয়ে ভালো ছিল। এর আগে, ভোক্তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়েও একটি ইতিবাচক খবর এসেছিল।
ই-ট্রেড ফ্রম মরগান স্ট্যানলির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস লারকিন বলেন, “অবশ্যই এটা উৎসাহজনক খবর। তবে বাজারের প্রশ্ন হলো, শুল্কের ক্রমাগত পরিবর্তনের মধ্যে মূল্যস্ফীতির ভালো খবর কতটুকু শোনা যাবে।”
অন্যদিকে, গত সপ্তাহে বেকারত্বের সুবিধার জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা কমেছে, যা প্রমাণ করে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজার স্থিতিশীল রয়েছে। যদি এই ধারা বজায় থাকে, তবে ভোক্তারা খরচ করতে পারবে এবং এটি অর্থনীতির জন্য ভালো হবে।
শেয়ার বাজারের অন্যান্য খবর
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) খাতের কিছু শেয়ারের দর পতন হয়েছে। এর মধ্যে পালানটির টেকনোলজিস ৩.২ শতাংশ এবং কনসটেলেশন এনার্জি ১.৮ শতাংশ কমেছে। এছাড়া, এনভিডিয়ার শেয়ারের দামও কমে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআই বিষয়ক শেয়ারের দাম অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় এই দর পতন হয়েছে।
অন্যদিকে, কিছু কোম্পানির শেয়ারের দামে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। এগুলোর মধ্যে, টেসলার শেয়ারের দাম ৩.২ শতাংশ কমেছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৪০ শতাংশের বেশি কমেছে। আমেরিকান ঈগল আউটফিটার্স-এর শেয়ারের দামও কমেছে।
তবে, ইন্টেল কর্পোরেশনের জন্য দিনটি ছিল আনন্দের। কোম্পানিটির সাবেক বোর্ড সদস্য এবং সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের অভিজ্ঞ লিবু তানকে নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর তাদের শেয়ারের দাম ১৬.৪ শতাংশ বেড়েছে।
বন্ড মার্কেট এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতি
বন্ড বাজারে ট্রেজারি ইল্ড সামান্য বেড়েছে। ১০ বছর মেয়াদী ট্রেজারির ইল্ড ৪.৩৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা জানুয়ারিতে ৪.৮০ শতাংশের কাছাকাছি ছিল। আন্তর্জাতিক বাজারের দিকে তাকালে দেখা যায়, ইউরোপ ও এশিয়ার শেয়ার সূচকগুলোও সামান্য কমেছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস