ডিজে টম লাউড, যিনি “হট ডাব টাইম মেশিন” তৈরি করেছেন, সঙ্গীতের জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি দর্শকদের এক যুগ থেকে অন্য যুগে নিয়ে যান, যেখানে পুরোনো দিনের গানগুলো নতুন করে পরিবেশন করা হয়। তাঁর এই অভিনব ধারণা ডিজে জগৎকে দিয়েছে এক নতুন সংজ্ঞা।
টম লাউড মনে করেন, ডিজে হওয়াটা অনেকটা পেশাদার কুস্তিগিরের মতো। কুস্তিগির যেমন অভিনয় করে, তেমনি একজন ডিজে-ও আসলে সঙ্গীতশিল্পীর ভান করেন। তাঁর মতে, “ডিজে-রা যতই ভালো হোক না কেন, তারা তো আসলে সঙ্গীতশিল্পী নন।”
টমের সঙ্গীত জীবনের শুরুটা হয় অন্যভাবে। তিনি অস্ট্রেলিয়ার টেলিভিশনে শব্দ প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করতেন। ‘আন্ডারবelly’ এবং ‘ম্যাকলিয়ডস ডটার্স’-এর মতো জনপ্রিয় অনুষ্ঠানে তিনি শব্দ ডিজাইন করেছেন। এমনকি, ‘ম্যাকলিয়ডস ডটার্স’-এর একটি দৃশ্যে যখন একটি গাড়ি খাদে পড়ে যায়, সেই শব্দটিও তৈরি করেছিলেন তিনি। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি বুঝতে পারছিলেন, টেলিভিশন জগতের ভবিষ্যৎ তেমন উজ্জ্বল নয়। তাই তিনি নতুন কিছু করার কথা ভাবেন।
টেলিভিশনে কাজ করার সময় তিনি ‘দ্য রনি জনস হাফ আওয়ার’ নামের একটি কমেডি অনুষ্ঠানে কয়েকজন কৌতুক অভিনেতার সঙ্গে পরিচিত হন। সেই সময় তিনি শখের বশে ডিজে-য় হাত পাকানো শুরু করেন। বন্ধুদের উৎসাহে তিনি তাঁর এই শখের প্রতি আরও মনোযোগী হন। প্রথমে তিনি ‘টম’স ভিডিও ডান্স-এ-রামা’ নামে একটি অনুষ্ঠান শুরু করেন, যেখানে ভিডিও ক্লিপ ও পপ সংস্কৃতির উপাদান ব্যবহার করা হতো। কিন্তু সেটি তেমন একটা সফল হয়নি।
পরে তিনি তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে মিলে সময়-ভ্রমণের ধারণা নিয়ে কাজ শুরু করেন। সেই সময় মুক্তি পাওয়া ‘হট টাব টাইম মেশিন’ নামের একটি সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি তাঁর অনুষ্ঠানের নাম দেন ‘হট ডাব টাইম মেশিন’। এই অভিনবত্বের কারণে তাঁর অনুষ্ঠান দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। অ্যাডিলেড ও এডিনবার্গ-এর মতো উৎসবে তাঁর পরিবেশনা ব্যাপক সাড়া ফেলে।
হট ডাব টাইম মেশিনের ধারণাটি খুবই সহজ। তিনি তাঁর শ্রোতাদের নিয়ে যান ১৯৫৪ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত। বিভিন্ন দশকের জনপ্রিয় গানগুলো পরিবেশন করেন তিনি। বিল হ্যালি অ্যান্ড দ্য কমেটসের ‘রক অ্যারাউন্ড দ্য ক্লক’ গানটি দিয়ে তিনি সাধারণত তাঁর পরিবেশনা শুরু করেন। এরপর গানের সুর ও কথার মিলের মাধ্যমে এক গান থেকে অন্য গানে যান, যা শ্রোতাদের মধ্যে অন্যরকম এক উন্মাদনা তৈরি করে।
উদাহরণস্বরূপ, সত্তরের দশকে ‘ড্যাডি কুল’-এর ‘ঈগল রক’-এর পর তিনি বাজান বনি এম-এর ‘ড্যাডি কুল’। আবার, আটের দশকে ডায়ানা রসের ‘আই’ম কামিং আউট’ গানের সঙ্গে শোনা যায় ‘আই অফ দ্য টাইগার’। নব্বইয়ের দশকে ইয়োথু ইয়িন্ডির ‘ট্রিটি’ গানের সঙ্গে টিআইএসএম-এর ‘গ্রেগ! দ্য স্টপ সাইন!!’ গানগুলো পরিবেশন করেন তিনি।
হট ডাব টাইম মেশিনের সাফল্যের পর টম লাউড ‘হট ডাব ওয়াইন মেশিন’ নামে একটি উৎসব শুরু করেন। এই উৎসবে তিনি একসঙ্গে আট থেকে পনেরো হাজার দর্শকের সামনে পরিবেশনা করতেন। তবে, অতিরিক্ত মদ্যপান ও মাদক গ্রহণের কারণে একসময় তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তিনি অনুভব করেন, সঙ্গীতের জগতে ভালো থাকতে হলে তাঁকে এই বিষয়গুলো থেকে দূরে থাকতে হবে। তাই তিনি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন।
বর্তমানে টম লাউড মাদক ও মদ্যপান থেকে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে নিয়েছেন। এখন তিনি তাঁর কাজে আরও বেশি মনোযোগ দেন। তাঁর মতে, “আমি এখন নিজেকে একজন শিল্পী হিসেবে দেখি।” তাঁর এই নতুন জীবনযাত্রা বুঝিয়ে দেয়, মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনা সম্ভব।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান