শিরোনাম: নোভা টুইনস: দ্বিধা ভাঙা, সঙ্গীতের জগতে নতুন দিগন্তের সূচনা
ব্রিটিশ রক ব্যান্ড নোভা টুইনস, যাদের দুই সদস্য অ্যামি লাভ এবং জর্জিয়া সাউথ, সঙ্গীতের জগতে নিজেদের স্থান তৈরি করেছেন। তাঁদের গানের ধারা, যা “নু-মেটাল” ঘরানার কাছাকাছি, এরই মধ্যে শ্রোতাদের মন জয় করেছে। তাঁদের সঙ্গীত জীবনের শুরুটা সহজ ছিল না, কিন্তু তাঁরা নিজেদের কাজ দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে কঠোর পরিশ্রম ও একাগ্রতা থাকলে সাফল্য আসবেই।
নোভা টুইনসের প্রথম অ্যালবাম ‘হু আর দ্য গার্লস?’ ২০২০ সালে প্রকাশিত হয়। এরপর লকডাউনের কারণে সরাসরি কনসার্ট করা কঠিন হয়ে পড়লেও, তাঁরা দ্বিতীয় অ্যালবামের কাজে মন দেন। ২০২২ সালে প্রকাশিত হয় ‘সুপারনোভা’, যা তাঁদের খ্যাতি আরও বাড়িয়ে দেয়। তাঁদের গান শুনে মুগ্ধ হয়েছেন এলটন জন, টম মোরেলোর মতো কিংবদন্তি শিল্পীরা। মিউজিক জগতে তাঁদের উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য তাঁরা ‘মার্কারি প্রাইজ’-এর জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, ‘ব্রিং মি দ্য হরাইজন’ এবং ‘মিউজ’-এর মতো জনপ্রিয় ব্যান্ডের সঙ্গে তাঁদের বিশাল কনসার্টে অংশগ্রহণের সুযোগ হয়েছে।
সঙ্গীত জগতে নারীদের পথচলা সব সময় সহজ হয় না। নোভা টুইনসের দুই সদস্য তাঁদের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছেন, পুরুষ শিল্পীদের তুলনায় নারীদের অনেক বেশি সন্দেহের চোখে দেখা হয়। অ্যামি লাভ বলেন, “পুরুষ শিল্পীরা যা করেন, তা নিয়ে সহজে প্রশ্ন ওঠে না। কিন্তু নারী শিল্পীদের ক্ষেত্রে সবকিছু খুঁটিয়ে দেখা হয়।” এই ধারণা ভাঙতে এবং সঙ্গীতের জগতে নিজেদের জায়গা পাকা করতে তাঁদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।
তাঁদের নতুন অ্যালবাম ‘প্যারাসাইটস অ্যান্ড বাটারফ্লাইস’-এ জীবনের নানা দিক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গানের কথায় একদিকে যেমন রয়েছে বিদ্রোহের সুর, তেমনি অন্য দিকে আছে গভীরতা ও আবেগ। অ্যামি লাভ বলেন, “আমরা সবসময় যে সুখী থাকব, তা নয়। আমাদের দুর্বলতাও আছে, যা আমরা গানে তুলে ধরেছি।”
নোভা টুইনস শুধু গান নয়, সঙ্গীতের জগতে আরও অনেক পরিবর্তনের জন্য কাজ করছেন। তাঁরা চান, সব ধরনের শিল্পী, বিশেষ করে সংখ্যালঘু এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষজন যেন সমান সুযোগ পান। এই লক্ষ্যে তাঁরা লন্ডনের ‘ইনস্টিটিউট অফ কন্টেম্পোরারি মিউজিক পারফরম্যান্স’ (ICMP)-এ একটি সঙ্গীত শিক্ষার বৃত্তি চালু করেছেন। তাঁদের এই উদ্যোগ প্রমাণ করে যে, সঙ্গীতের জগতে পরিবর্তন আনার জন্য তাঁরা কতটা আন্তরিক।
নোভা টুইনস-এর গল্প শুধু একটি ব্যান্ডের সাফল্যের গল্প নয়, বরং এটি একটি অনুপ্রেরণামূলক দৃষ্টান্ত। তাঁদের গান ও কাজের মাধ্যমে তাঁরা প্রমাণ করেছেন যে, কঠোর পরিশ্রম, একাগ্রতা এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সমাজের প্রচলিত ধারণা ভেঙে দেওয়া সম্ভব। সঙ্গীতের প্রতি তাঁদের ভালোবাসা ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা, তাঁদের ভবিষ্যৎকে আরও উজ্জ্বল করবে, এমনটাই প্রত্যাশা।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান