কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন (Artificial Intelligence বা AI) একটি নতুন সাহিত্যকর্ম নিয়ে বিশ্বজুড়ে সাহিত্যিকদের মধ্যে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
সম্প্রতি, ChatGPT নামক একটি AI মডেলের তৈরি করা একটি ছোট গল্প প্রকাশিত হওয়ার পরেই এই বিতর্কের সূত্রপাত হয়।
গল্পটি লেখার পর এর সাহিত্যমান নিয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন খ্যাতিমান লেখকেরা।
কেউ কেউ এর শৈল্পিক ক্ষমতায় মুগ্ধ, আবার কারো মতে এতে মানবিক অনুভূতির গভীরতার অভাব রয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে, AI এর সাহিত্যচর্চা এবং এর ভবিষ্যৎ নিয়ে বাংলাদেশের লেখক ও পাঠকদের মনেও কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে।
গল্পটি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে অনেক লেখকই AI এর সৃজনশীলতাকে একটি নতুন “বুদ্ধিমত্তা” হিসেবে দেখার কথা বলেছেন।
কেউ কেউ মনে করেন, AI কে যদি একটি “বিকল্প সত্তা” হিসেবে বিবেচনা করা যায়, তাহলে এর সঙ্গে মানুষের একটি সম্পর্ক তৈরি হতে পারে।
তবে অনেকের মতে, এটি মূলত সফটওয়্যার নির্ভর একটি প্রক্রিয়া, যেখানে মানুষের লেখা থেকেই তথ্য নিয়ে একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হচ্ছে।
এক্ষেত্রে, সরকারের নীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
লেখকদের অধিকার সুরক্ষিত হবে, নাকি প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর একচেটিয়া আধিপত্য বাড়বে, সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
লেখকদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন, AI এর গল্পে মানবিক অনুভূতির অভাব রয়েছে।
তারা এর ভাষা ও ধারণাকে ধার করা বলে মনে করেন।
তাদের মতে, AI এখনো সেই “জাদু” তৈরি করতে পারেনি, যা একজন মানুষের লেখায় পাওয়া যায়।
AI দ্রুত শিখছে, তবে তারা আশঙ্কা করছেন, যদি AI সেই “জাদু” যোগ করতে পারে, তাহলে তাদের পেশা হুমকির মুখে পড়বে।
অন্যদিকে, কারো কারো মতে, AI এর গল্পটি বেশ আকর্ষণীয়।
গল্পটি মেটাফিকশন ঘরানার হওয়ায় এটি পাঠকের কল্পনাশক্তির ওপর প্রভাব ফেলে।
গল্পের দুর্বলতা সত্ত্বেও, কিছু লেখক এর গভীরতা ও বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করেছেন।
তারা মনে করেন, AI এর গল্পটি সম্ভবত মানুষের প্রতি একটি বিদ্রূপ, যেখানে তারা এমন এক সত্তার গল্প বলছে, যার অনুভূতি নেই।
গল্পটিতে শোকের একটি প্রতিচ্ছবি রয়েছে, যা মানুষের মনে গভীরতা সৃষ্টি করে।
এই বিতর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো কপিরাইট এবং মেধাস্বত্বের প্রশ্ন।
AI সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে, লেখকদের কাজ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
এই তথ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে কপিরাইট আইন লঙ্ঘিত হচ্ছে কিনা, সেই বিষয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
কারণ, একটি AI মডেল তৈরি করতে বিভিন্ন লেখকের লেখা ব্যবহার করা হয়, যা মেধাস্বত্ব আইনের পরিপন্থী হতে পারে।
AI-এর সাহিত্যচর্চা একদিকে যেমন নতুন দিগন্তের সূচনা করছে, তেমনি এর কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে।
প্রযুক্তি, সাহিত্য এবং সমাজের উপর এর প্রভাব নিয়ে এখন আলোচনা চলছে।
ভবিষ্যতে, AI-এর সাহিত্যকর্ম মানুষের সৃজনশীলতাকে কীভাবে প্রভাবিত করবে, তা সময়ই বলবে।
তথ্য সূত্র: The Guardian